ই-অরেঞ্জের ফাঁদ-২

টাকা ফেরত পেতে ই-অরেঞ্জে ধর্ণা লাখো গ্রাহকের

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৪১ | প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:৩৪

সম্প্রতি আলোচনায় আসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জে মোটা অঙ্কের লাভের আশায় টাকা জমা দিয়েছিলেন লক্ষাধিক গ্রাহক। সেই টাকা ফেরত পেতে এখন প্রতিষ্ঠানটির কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন তারা। কবে, কীভাবে টাকা ফেরত পাবেন, জানা নেই তাদের। এমনকি আদৌ এই টাকা ফেরত পাবেন কি না সেটা নিয়েও আছে সন্দেহ।

প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে নিজেদের টাকা পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ই-অরেঞ্জের গ্রাহকেরা। গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর গুলশানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন কয়েক হাজার গ্রাহক। কিন্তু ই-অরেঞ্জের মালিকপক্ষের কারও দেখা পাননি তারা।

এরপর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিয়মিত সমাবেশ করে আসছেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শতাধিক গ্রুপ খুলেছেন। সেখানে এটা নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্ত্তুজার সহযোগিতায় গ্রেপ্তার হয়েছে ই-অরেঞ্জের মালিকপক্ষ। তবে এখন গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটিতে পণ্যের জন্য টাকা জমা দিয়ে এখন তারা বিপদে। অনেকে আবার নিজেদের সর্বস্ব তুলে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হাতে। এখন পণ্য বা টাকা ফেরত না পেলে পথে বসতে হবে তাদের।

প্রতিষ্ঠানটি থেকে কম দামে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য কিনতে ১৪ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন মহিউদ্দিন তুহিন। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা তুহিন ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসায়ী। ব্যবসার পুঁজি এবং কিছু টাকা ধার করে ই-অরেঞ্জে জমা দিয়েছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, তিন মাস পর মোটা অংকের লাভের। কিন্তু এখন তিনি চোখের সামনে শুধু অন্ধকার দেখছেন।

তুহিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘১৪ লাখ টাকা দিয়েছি। অনেক কষ্টের টাকা। এর মধ্যে কিছু টাকা ধারের আছে। পরিকল্পনা ছিল ই-অরেঞ্জ থেকে মোটরসাইকেল পেলে ধারের টাকা দিয়ে দেব। পাশাপাশি ভালো একটা লাভও হবে। কিন্তু এখন তো আমি বিপদে পড়ে গেলাম। আমার তো সবকিছু শেষ হওয়ার পথে।’

টাকা দিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানটির দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হচ্ছে জানিয়ে তুহিন বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের টাকার বিপরীতে পণ্য বা চেক দেওয়ার কথা। সেই সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। এখন আমরা তাদের অফিসের সামনের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। কারও কোনো সাড়া নেই।’

একই অবস্থা মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা কাজী সাদ্দাম হোসেনের। ই-অরেঞ্জে মোটা টাকা দিয়ে এখন দিশেহারা তিনি।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী সাদ্দাম ঢাকা টাইমসকে জানান, দেশের খ্যাতনামা ও নির্ভরযোগ্য মানুষ (মাশরাফি) যখন এই প্রতিষ্ঠানটির ওপর ভরসা রাখার কথা বলে, তখন সন্দেহ করেননি তিনি। কিন্তু সেই ভরসা আজ তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মে ও জুন মাসে টাকা জমা দিয়েছেন জানিয়ে সাদ্দাম বলেন, ‘বাইক ও কিছু পণ্যের জন্য টাকা দিয়েছিলাম। আগস্টে ডেলিভারি পাওয়ার কথা। কিন্তু একটা পণ্যও পাইনি। এছাড়া স্বপ্ন সুপার শপের ভাউচার কিনেছিলাম। সেগুলোও পাইনি।’

নিজের টাকা ফেরত পেতে এখন কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে তার কিছুই জানেন না সাদ্দাম। তিনি বলেন, ‘আমার টাকা ফেরত পাওয়ার পথ কী? এখন আমি সব কিছু ফেলে দিয়ে ই-অরেঞ্জের অফিসের নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। রাস্তায় গিয়ে মানববন্ধন করতে হয়। অথচ আমরা সেভাবে কারও সহযোগিতা পাচ্ছি না।’

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিকপক্ষ প্রতারণামূলকভাবে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে- এমন অভিযোগে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের বিরুদ্ধে এক গ্রাহক গুলশান থানায় মামলা করেন।

মামলায় ই-অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, মালিক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদসহ প্রতিষ্ঠানটির সব মালিককে আসামি করা হয়। পরে সোনিয়া মেহজাবিন ও মাসুকুর রহমান জামিন চাইতে গেলে আদালত জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়, যা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু ই–অরেঞ্জ এক লাখ ভুক্তভোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসেব।

আরো পড়ুন:

(ঢাকাটাইমস/০২সেপ্টেম্বর/কারই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :