কারসাজি তদন্তের মধ্যে পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৪৭ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৫৬

একগুচ্ছ অনিয়মে প্রায় এক যুগ (ওভার দ্য কাউন্টার) ওটিসি মার্কেটে ছিল পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। গত ১৩ জুন থেকে ওটিসি মূল মার্কেটে লেনদেনের সুযোগ দেয়া হয়। এরপর থেকে টানা বাড়তে থাকে শেয়ারদর।

কেন বেড়েছে, কারা এই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখতে গত ১০ আগস্ট একটি চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এরই মধ্যে ফের হু হু করে বাড়ছে পেপার প্রসেসিংয়ে শেয়ার দর। ১৩ জুন থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন মাসে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৩৬ শতাংশ।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, বিএসইসিকে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, লভ্যাংশ প্রদান না করা ও সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন না করাসহ একগুচ্ছ অনিয়মের কারণে ২০০৯ সালে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডসহ ৬৬টি কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়।

মুনাফায় ফেরার পাশাপাশি সুশাসনে উন্নতি করায় গত ১৩ জুন ওটিসি মার্কেট থেকে পেপার প্রসেসিং কোম্পানিসহ চারটি কোম্পানিকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা হয়।

চলতি বছরের ১৩ জুন থেকে মুল মার্কেটে লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি। এরপর থেকে কারসাজি শুরু করে শেয়ার দর বাড়াচ্ছে তারা। পেপার প্রসেসিং ওটিসি থেকে মুল মার্কেটের লেনদেনের দিন শেষে ছিল ১৭.৬ টাকা, বৃহস্পতিবার শেয়ার দর দাঁড়ায় ১৯৯.৯ টাকা বা শেয়ার দর বেড়েছে ১০৩৬ শতাংশ বা ১৮২.৩ টাকা।

কোম্পানিটি দীর্ঘদিন বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিলেও এবং ইপিএস ভালো না থাকার পরও প্রতিনিয়ত শেয়ার দর বাড়াতে ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কাজী রফিকুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, পুঁজিবাজারে আসার যে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কোনও লভ্যাংশ দেয় না সে কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার কোনও কারণই নেই। বুঝে নিতে হবে এখানে কারসাজি আছে।

পেপার প্রসেসিং ১৯৯০ সালে পূঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও ২০১৯ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ বছর কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। তবে তারা মূল মার্কেটে আসার জন্য ২০২০ সালে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পেপার প্রসেসিং মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ১৫৭ টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৫৯ কোটি লাখ ২৩ হাজার ৪৯৫ টাকা; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ কোটি ১৩ লাখ ১৬ হাজার ২৮৭ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ কোটি ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২০৮ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ৮২ টাকা নিট মুনাফা করেছে।

পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৭.২৮ টাকা; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭.৭২ টাকা; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৮.২৫, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫.১৫ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭.১০ টাকা। কিন্তু গত ৯ মাসে (জুলাই২০- মার্চ২১) কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ০.৪৪ টাকা।

এদিকে, গত ১০ আগস্ট পেপার প্রসেসিং সহ নয় কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি হয়েছে কি না তা খুঁজতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জিবিবি পাওয়ার, এমারেল্ড অয়েল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, ন্যাশনাল ফিড মিল, ঢাকা ডায়িং, ফুওয়াং সিরামিক ও বিকন ফার্মা।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, স¤প্রতি নয়টি কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। শেয়ারদর কেন বেড়েছে, কারা এই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত তা খতিয়ে দেখতে একটি চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিএসইসির সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান মইনুল হক। কমিটিতে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে, হঠাৎ করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বাড়ল কেন তা খতিয়ে দেখা হবে। কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপন করেছে কি-না তাও দেখা হবে। এছাড়াও কোম্পানির কর্মকর্তা এবং উদ্যোক্তাদের যোগসাজশ রয়েছে কি-না তা খুঁজে বের করা হবে।

‘সর্বোপরি এই উদ্যোগের মাধ্যমে মার্কেটে একটি মেসেজ যাচ্ছে যে, কমিশন মার্কেট কঠোরভাবে অবজারভেশন করছে। এতে কেউ অবৈধ কর্মকান্ড করতে ভয় পাবে’-যোগ করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৪সেপ্টেম্বর/আরএ/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :