খুলনায় বাড়ছে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৩৩ | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৩৮

খুলনা অফিস, ঢাকাটাইমস

খুলনা নগরীর শতকরা আশি ভাগ ব্যক্তিগত ডায়াগনিস্টক সেন্টারের নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন, নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা উন্নত হচ্ছে। এসব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালেও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের কার্যকর তদারকির অভাবে এসব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীরা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করলেও সঠিক নির্ভুল রিপোর্ট হতে বঞ্চিত হচ্ছে। একই টেস্ট বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসছে ভিন্ন রিপোর্ট। এমনকি সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারিরাও এখন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে, অলিগলিতে বাহারী প্যানা ফেস্টুন দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামসহ লেখা রয়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নাম, বড় বড় পদবি ডিগ্রিসহ বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ। তবে এসব চিকিৎসকদের অনেকের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের গোপন অর্থের চুক্তি রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালে নেই ডিপ্লোমাধারী নার্স, নেই দক্ষ টেকনেশিয়ান, অ্যাম্বুলেন্স ও বর্জ্য অপসারণের সুব্যবস্থা। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রয়েছে মার্কেটিং পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত দালাল। আর এসব দালালদের কাজ সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে রোগী নিয়ে আসা। ফলে অধিকাংশ রোগী সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে কতিপয় অসাধু চিকিৎসকদের অতিরিক্ত পরীক্ষার ফাঁদে পড়ে অর্থ খুইয়ে দিশেহারা অসহায় হয়ে পড়ছেন গরিব রোগীরা। এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে খুলনা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শওকত লস্কর বলেন, খুলনা ও তার আশপাশের উপজেলাগুলোতে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশের নেই কোনো অনুমোদন, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। অনুমোদন ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আমার দাবি, দ্রুত এসব ভুয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক, যেন মানুষের সঙ্গে কোনো প্রতারণা তারা করতে না পারে। এসব ডায়াগনিস্টক সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হোক।

এদিকে শহীদ শেখ আবুনাসের হাসপাতালের সাবেক উপ-পরিচালক ও খুলনা সিটি মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আলী হোসেন বলেন, নগরীতে হঠাৎ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছেয়ে গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশরই নেই অনুমোদন। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার আবার দালাল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পাশাপাশি কতিপয় চিকিৎসক অর্থের লোভে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠাতে উৎসাহ বোধ করেন। তবে দ্রুত এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

খুলনা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. গাজী মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আধুনিক হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। প্রতিটি মানুষের চিকিৎসা একটি মৌলিক চাহিদা। তবে ব্যক্তিগত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোর অবস্থা অনেক খারাপ। এসব জায়গায় কর্তৃপক্ষর তদারকি অভাবে ইচ্ছামত রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাই দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, খুলনা বিভাগসহ জেলা পর্যায়ে অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কয়েক দিন আগেও রূপসায় একটি হাসপাতাল র‌্যাবের সহযোগিতায় সিলগালা করেছি। তাছাড়া আমাদের সঠিক তথ্য দিলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/পিএল)