স্কুল-কলেজ খুললেও উদ্বেগ কাটছে না অভিভাবকদের

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:১৭

করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু এরই মাঝে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় দেড় বছর পর খুলছে স্কুল-কলেজ। স্বভাবতই ঘরবন্দী শিক্ষার্থীরা উৎফুল্ল। তবে উদ্বেগ কাটছে না অভিভাবকদের। করোনা ও ডেঙ্গু থেকে শিশুরা কতটা নিরাপদ থাকবে সেই দুশ্চিন্তা তাড়া করছে অভিভাবকদের।

ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী সম্প্রীতি ঘোষ। তার মা তিন্নি ঘোষ বলেন, স্কুল খুললেও এখন আমি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবো না। দেশে করোনার প্রকোপ একটু কমলেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে বিদ্যালয়েও এডিস মশার উপদ্রব। আর করোনার কথা তো বলা যায় না। কোথা থেকে কী হয়ে যায়! একজনের হলেই সবাই আক্রান্ত হবে। তাই স্কুল খুললেও এই মুহূর্তে আমি আমার বাচ্চাকে স্কুলে যেতে দেব না। কিছুদিন দেখবো, তারপর যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তারপর স্বিদ্ধান্ত নেব।

ছায়ানটের তত্বাবধানে পরিচালিত ধানমন্ডির নালন্দা হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ধ্রুব ঘোষ। করোনা পূর্ববর্তী নিয়মিত ক্লাস করত। করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পর খোলার ঘোষণায় দারুণ খুশি। তবে স্কুল খুললেও যেতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে তার মনে। কারণ পরিবার চায় না এই মুহূর্তে তাকে স্কুলে পাঠাতে।

ধ্রুবর মা মানসি ঘোষ বলেন, সরকার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি এখনও খারাপ। সেই সঙ্গে ডেঙ্গুও আছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রোগ হলে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে; কিন্তু বাচ্চাদের যদি স্কুলে গিয়ে কোনো সমস্যা হয় তখন কী হবে? আর বাচ্চাদের তো রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও কম।

এই পরিস্থিতিতে স্কুল খুললে কী সিদ্ধান্ত নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি আমার বাচ্চাদের স্কুলে যেতে দেব না। কিছুদিন দেখব পরিস্থিতি কী হয়। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। স্কুল খোলার পরে দেখব স্কুলে কেমন স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে, কতটা দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আগে কিছুদিন দেখব, তারপর পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবো।

মাইলস্টোন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র দিপ্ত। দিপ্তর বাবা আমিনি রহমান বলেন, স্কুল খোলার প্রথম দিনে আমি আমার ছেলেকে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে পাঠাবো। প্রথকে কয়েকদিন দেখব স্কুলের কী পরিস্থিতি। তারপর যদি দেখি স্কুলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে এবং আমার বাচ্চা সেখানে নিরাপদ, তাহলে নিয়মিত স্কুলে পাঠাবো।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১২ সেপ্টেম্বর থেকেই খোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেদিন থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত কমছে। অভিজ্ঞতা বলছে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সংক্রমণের হার কম থাকে। আর টিকা কার্যক্রম যে গতিতে চলছে, সে বিবেচনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করব। প্রাথমিকের পঞ্চম এবং ২০২১ সালে যারা এসএসসি ও এইচএসসি এবং ২০২১ সালে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে হবে। এছাড়া প্রাইমারির ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষাথীরা সপ্তাহে একদিন করে ক্লাসে আসবে।

তিনি বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর শুরুর দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে চেকলিস্ট পূরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। র‌্যান্ডম স্যাম্পলিং করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। আপাতত স্কুলে অ্যাসেম্বলি হবে না। স্কুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করাতে হবে। তবে ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা খেলাধুলা চলবে, যাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকতে পারে।

ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ক্লাস শুরু হলেও প্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে আগে একই শ্রেণিকক্ষে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী বসত, তাদেরকে দুই থেকে তিনটি শ্রেণিকক্ষে বসাতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রতিদিন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।

দীপু মনি আরও জানান, যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে যারা শুরুতে একদিন করে ক্লাসে আসবে, তাদেরকে ধীরে ধীরে দুইদিন, এরপর তিনদিন, এভাবে পর্যায়ক্রমে সবকিছু স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। কারো বাড়ির কোনো সদস্যর করোনাভাইরাস উপসর্গ থাকলে তার ক্লাসে আসার দরকার নেই বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

এদিকে মহামারি করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি আছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ছুটি আর বাড়ছে না বলে জানানো হয়েছে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। পরে কয়েক দফা চেষ্টা করেও এই মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর খোলা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে।

চলমান এই ছুটি আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান ছুটি অব্যাহত থাকবে।

সম্প্রতি সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/আরকে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :