ইউনিক হোটেল ও সি পার্লের ব্যবসায় ধস

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৯ | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৪২

করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে পর্যটনখাতে। বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক দাতানির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুষ্ঠান আয়োজনও প্রায় বন্ধ। হোটেলে আয়োজন করা হয় এমন অসংখ্য অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। প্রথম বছরের টানা ৬৬ দিনের লকডাউনে কার্যত অতিথিশূন্য ছিল হোটেলগুলো। এতে করে ব্যবসায়ে ধস নেমেছে হোটেলগুলোর।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড (ওয়েস্টিন হোটেল) ও সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের ব্যবসা শূন্য। ব্যবসা সংকট কাটতে সরকারের কাছে বিশেষ সুবিধা চেয়েছে ইউনিক হোটেল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে তালিকাভুক্ত ইউনিক হোটেলের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। করোনা সংকটে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে বাড়ছে। ২০২০ সালের জুন শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৯ পয়সা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে হোটেলটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৯ পয়সা। অথচ ২০২০ সালের জুন শেষে ইউনিক হোটেলের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ২.০৯ টাকা। এবং ২০২০ সালের জুন শেষে ইপিএস হয় ৯৫ পয়সা।

ইউনিক হোটেলের নিট মুনাফা ২০১৯ সালে ছিল ৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এটি ২০২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ১ লাখ টাকা।

শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্যও কমেছে। হোটেলটির এনএভি ২০১৯ সালে ছিল ৮০.৬৯ টাকা। এটি ২০২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭৯ টাকা।

২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কিন্তু পরের বছর েেক ২০১৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বিনিয়োগকারীরা কোনো লাভের মুখ দেখেনি। তবে ২০১৬ েেক ২০২০ সাল পর্যন্ত সর্বনি¤œ ১০ এবং সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির স্বল্পমেয়াদি ঋণ আছে ২০৩ কোটি ১৯ লাখ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৩২৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

এদিকে, গত ২২ জুন অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুজন সদস্যকে চিঠি দেন ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহা. নূর আলী। চিঠিতে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেন। বলেন, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২১৮ কোটি টাকা আয় করেছিল। যা পরের বছর করোনার কারণে ১৫৭ কোটিতে নামে। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ ৯ মাসে আয় করে ৫০ কোটি টাকা। এই সময়ে স্থায়ী ব্যয় দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ জন্য তিনি পাঁচ বছরের জন্য আয়কর ও ভ্যাট দেওয়া থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।

অপরদিকে, ২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড শেয়ারপ্রতি আয় দেখায় ৪৪ পয়সা। এ সময়ের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তবে ২০২০ সালে আয় ধরে রাখতে পারেনি হোটেলটি। গত বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৯ পয়সা। ফলে বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় গত বছরের মতো ২০২১ সালে শেয়ারহোল্ডাদের জণ্য এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

২০১৯ সালে সী পার্লের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩৭ পয়সা। তবে করোনা সংকটে ব্যবসা মন্দা হওয়ায় ২০২০ সালের জুন শেষে শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৯ পয়সা। গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬০ পয়সা। এনএভিও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালেও কমে ১০.০৬ টাকা দাঁড়ায়।

২০১৯ সালে সী পার্লের নিট মুনাফা ছিল ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০২০ সালে উল্টো লোকসান হয় ১ কোটি ১০ লাখ ৫ হাজার টাকা। পর্যটন খাত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা মহামারির কারণে যে ক্ষতি পর্যটনখাতসহ হোটেলশিল্পে হয়ে গেছে, তা খুব শিগগির কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে ক্ষতি পোষাতে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. শাকের আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনা গোটা পর্যটনশিল্পের অকল্পনীয় ক্ষতি করেছে। গোটা বিশ্বের পর্যটন তথা অর্থনীতিতেই করোনা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’

ড. শাকের আহমেদ বলেন, ‘তিন, চার ও পাঁচ তারকা হোটেলগুলো বাইরে থেকে চাকচিক্য মনে হলেও আসলে করোনায় তাদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। আয় না হওয়ায় তাদের বেতনের একটি অংশ কর্তন করেছে কর্তৃপক্ষ। এখনো পরিস্থিতি ভালো নয়। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাও বলা কঠিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই ক্ষতি কত দিনে পুষিয়ে উঠতে পারবে তা বলা সহজ নয়। অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যেতে পারে। পুঁজিবাজারে হোটেলশিল্পের যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তারাও এর বাইরে নয়। তাদেরও সুদিন ফিরতে অনেক সময় লাগবে।’

(ঢাকাটাইমস/৭সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :