শিক্ষার্থীদের বরণে প্রস্তুতি চলছে প্রিয় আঙিনায়

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৩৫ | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:১১

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

সবকিছু ঠিক থাকলে আর পাঁচ দিন পর আবার খুলতে যাচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবার শিশু-কিশোর, তরুণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর হবে শ্রেণিকক্ষ। তাদের পদচারণে প্রাণময় হয়ে উঠবে দীর্ঘ দেড় বছর নির্জীব পড়ে থাকা প্রিয় আঙিনা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের বরণ করতে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো ছুটি শেষ হবে আসছে ১১ সেপ্টেম্বর। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর ঘুচবে শিক্ষার্থীদের ‘গৃহবন্দিত্ব’।  

তবে করোনা সতর্কতার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। রাজধানীর একাধিক প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা গেছে, স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে হাত ধোয়ার বেসিন ও পানির কল। পরিষ্কার করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত না হওয়া শ্রেণিকক্ষের ধুলো-ময়লার স্তূপ।

স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা পালনে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেজন্য শেষ মুহূর্তের পরিকল্পনাও করছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।

রাজধানীর ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল এবং ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সরেজমিন ঘুরে এমনটা দেখা গেছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা মাপা হবে। কারও তাপমাত্রা বেশি হলে তাকে বাসায় ফেরত পাঠানো হবে। স্কুলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের মাস্ক দেয়ারও পরিকল্পনা আছে।

কবি নজরুল কলেজের ভেতরে অবস্থিত ইসলামিয়া স্কুলে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক মিলনায়তনে একাধিক শিক্ষক অ্যাসাইনমেন্টের খাতা দেখছেন। কেউ আবার সুবিধা-অসুবিধা আছে কি না তা দেখভাল করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষিকা শিরিন আখতার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যতবারই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হয়েছে, আমরা প্রতিবারই প্রস্তুতি নিয়েছি। তাই এবার আমাদের চাপ কম। যদি এখনই ক্লাস নিতে বলা হয় সে প্রস্তুতি আছে আমাদের।’

নিজেদের প্রস্তুতির বিষয়ে শিরিন আখতার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র কেনা হয়েছে। যাতে করে হাত ধুয়ে নিতে পারে সেজন্য একাধিক বেসিন এবং পানির কল লাগানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক আছে, হ্যান্ডস্যানিটাইজারও দেয়ার পরিকল্পনা আছে।’

শ্রেণিকক্ষ প্রস্তুত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন রুমগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। নিয়ম করে দুবার লাইট-ফ্যান চালানো হচ্ছে যাতে রুম বন্ধ থাকার কারণে ভাপসা গন্ধ না হয়। আশা করি নিয়ম মেনে চললে সবকিছু ঠিকঠাক চলবে।’

একাধিকবার সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সময় নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হবে শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান।
তবে এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মানতে হবে বেশ কিছু শর্ত। আবার খোলার পর এসব শর্ত ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে কি না বা স্কুল খোলার পর করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কেমন হয় তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে কর্তৃপক্ষ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ‘আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করব এবং প্রতিটি স্কুলের ওপর প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট দেয়া হবে। যেখানে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই সেখানে বিকল্প দিনে ক্লাস হবে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, তিনটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে -তাপমাত্রা পরীক্ষা করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের ব্যবস্থা করা, প্রবেশের পর স্বাস্থ্যবিধি মানা বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মোটা দাগে এগুলো অবশ্য করণীয়। এরপর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী বিষয়গুলো বলব আমরা।’ স্কুলগুলো ইতোমধ্যে এগুলো জানে এবং তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্কুল খোলার আগে সরেজমিন প্রস্তুতি দেখবেন। 

গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানপ্রধান অন্য শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করছেন কীভাবে পাঠদান কার্যক্রম শুরুর জন্য স্কুল পুরোপুরি প্রস্তুত করা যায়। 

ফাঁকে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে তারা শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, মাঠের ঘাস কেটে ফেলার ব্যবস্থা করবেন। 

ঢাকাটাইমসকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মাহবুবা হক বলেন, ‘আমরা একাধিক জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজনে আরও করব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য যেসব নির্দেশনা আছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আশা করি নির্ধারিত সময়ে সবকিছু প্রস্তুত করতে পারব।’

(ঢাকাটাইমস/৭সেপ্টেম্বর/মোআ)