জাদুঘরে এসে 'অনলাইন টিকিটের' বিড়ম্বনা!

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১৩ | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:৪৬

ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রাচীন সব নিদর্শনের সঙ্গে পরিচয় করাতে সাত বছরের আকিফকে নিয়ে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এসেছিলেন বরিশালের শফিকুল ইসলাম। সঙ্গে ছোট মেয়ে ও স্ত্রী। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে জাদুঘরের সামনে অনেকটা বিষণ্ন মনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিলেন তিনি, ‘সব খুলে দিছে আর এরা (জাদুঘর) অনলাইন টিকেট ছাড়া নাকি ঢুকতে দিবে না। এইডা কোনো কথা!'

মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে শফিকুলের মতো প্রায় অর্ধশতাধিক দর্শনার্থীকে কড়া রোদের মধ্যে অনলাইন টিকেট বিড়ম্বনার মুখে পড়তে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে যেমন শিশুরা ছিল, তেমনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।

করোনার প্রকোপ বাড়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের পাশাপাশি জাদুঘরও বিধিনিষেধের আওতায় ছিল। সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। তবে মাঝে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সরাসরি টিকেট বন্ধ করে অনলাইনে টিকেট কেটে জাদুঘরে প্রবেশের সুযোগ নিয়ম করা হয়। জাতীয় জাদুঘরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেয়া হয়।

মূল ফটকেও এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বোর্ড টাঙিয়ে রাখা আছে। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি না জানার কারণে ঘুরতে এসে বিপাকে পড়ছেন। কেউ আবার অনলাইনে আবেদন করতে চেয়ে ইন্টারনেট সমস্যা, কেউ আবার বিকাশ বা রকেটে টাকা না থাকার কারণে টিকেট কাটতে পারছেন না। ফলে নানা দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে জাদুঘরে এসেও বিফল হয়ে বাইরে থেকে চলে যেতে হচ্ছে অনেককে।

অবশ্য জাদুঘরের পাশের ফুটপাতে বিকাশের দোকানে অনলাইনে টিকেট কাটার ব্যবস্থা আছে। তবে সেখানে ২০ টাকার টিকেটের জন্য ১০ টাকা বেশি দিতে হয়।

বাড্ডা থেকে আসা শামীম ও শাকিল নামের দুই ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শুনেছি অনলাইনে টিকেট কাটতে হয়। কিন্তু এখন তো সব স্বাভাবিক, তাই ভেবেছি কাউন্টারেও টিকেট পাব। কিন্তু এসে দেখি অনলাইন ছাড়া হবে না। এখন ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে কাউন্টারে অনলাইনে টিকেট কাটার ব্যবস্থা করারও দাবি এই দুই যুবকের।

জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছেন, দর্শনার্থীদের এই দুর্ভোগের বিষয়টি তারা জানেন। কিন্তু এ-সংক্রান্ত জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিদ্ধান্ত ছাড়া সরাসরি টিকেট দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এমন দুর্ভোগের কথা আমরা জানি। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত বদল করার সুযোগ নেই। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিদ্ধান্তেই অনলাইনে টিকেট দেয়া হচ্ছে। তারপরও আমরা দর্শনার্থীদের সমস্যার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করব।’ আগের মতো সরাসরি টিকেট দেয়া হলে দর্শনার্থী বাড়বে, তাতে জাদুঘরের আয় বাড়বে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

জাদুঘরের ফটকে দায়িত্বরত একজন আনসার সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষ এসে ফিরে যায়, আমাদেরও খারাপ লাগে। সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা ক্লান্ত।’

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপের কারণে অনলাইনে টিকেট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দিনে ৮০০ টিকেট দেয়া হলে সেটি অটো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যদি এভাবে দুর্ভোগ হয় তাহলে মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অনস্পট অনলাইনে টিকেট কাটার ব্যবস্থা করা যায় কি না সেটাও চিন্তা করা যেতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/০৭সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :