অতিমারীকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৪৬

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

ধীরে ধীরে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকেই তৎপর ছিলেন দুটো বিষয়ে: ‘জীবন ও জীবিকা’ এবং ‘জীবন ও শিক্ষা’। যেহেতু সংক্রমণের হার কমে আসছে সেজন্যে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ থেকে এইচএসসি, এসএসসি ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। পাশাপাশি ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাসসমূহ সপ্তাহে একদিন করে হবে বলে জানা যায়। অন্যদিকে প্রাক-প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকছে, যা সঠিক সিদ্ধান্ত। এদিকে মেডিকেল কলেজসমূহে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ফিজিক্যাল ক্লাস শুরু হবে। আসলে শিক্ষা হচ্ছে মানুষের জাতীয় জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অন্যতম মৌলিক অধিকার। তবে জীবনে বেঁচে থাকলে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করছেন। তবে এদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদরা উপযাজক হয়ে অতিমারীর সময়ে কি ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুলে দেশের শিক্ষা বিস্তার সম্ভব হবে সে সম্পর্কে একটি রূপরেখা দিতে পারতেন। শিক্ষার মান এবং দীর্ঘদিন পর আবার পড়াশোনায় ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত কাজ। কেননা সরকার প্রথম থেকেই টিভি ও অনলাইনে শিক্ষা চালু রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। তবে সবাই যে আগ্রহ সহকারে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহী ছিলেন তা কিন্তু নয়। শিক্ষা বিস্তারের জন্য গত বারো বছরে সরকার অনেক কিছু করেছেন। তবে সমস্যা হলো অতিমারীর সমস্যাটি বিশ্বজনীন এবং এর জন্যে আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে যেমন গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা তেমনি অতিমারীকালীন সময়ে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যারা শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠানে আসবে তারা যেন মাস্ক পরে এবং বিদ্যালয়গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে জন্য অবশ্যই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষকবৃন্দ, সহযোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দকে কাজ করতে হবে। তবে এ মুহূর্তে পঞ্চম শ্রেণিতে একদিন ক্লাস থাকলে ভালো হতো- তাদের মধ্যে যে চাঞ্চল্য কাজ করে সে জন্য সে ধরনের তদারকির ব্যবস্থা ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষকবৃন্দ স্কুলে সামলাতে পারবেন কি না সেটি লক্ষণীয় বিষয়। আর পঞ্চম শ্রেণিতে এবার পিএসসি না হয়ে নিজ কেন্দ্রে সমাপনী পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম। মাস্ক যাতে গ্রামেগঞ্জে এবং স্কুল-কলেজের উল্টোদিকে যে সমস্ত দোকানপাট আছে সেখানে সহজলভ্য করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনকে একযোগে কাজ করতে হবে। হঠাৎ মাস্ক নষ্ট হয়ে গেলে, কেউ যদি মাস্ক না পরে আসে তাকে কোনো মতেই বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া ঠিক হবে না। বরং অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে প্রতিদিন আসার ব্যবস্থা করা দরকার এবং তাদের পরীক্ষা স্ব স্ব স্কুলে কেন্দ্র হিসাবে নেয়া উচিত। এদিকে এসএসসি এবং এইচএসসির সিলেবাস ছোট করা হয়েছে যা যথাযথ। তবে এ ক্ষেত্রে দুটো কথা না বললেই নয়, কখন অতিমারীর সংক্রমণ আবার বাড়বে জানি না। সেজন্যে বিকল্প পন্থায় বোর্ডওয়ারী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা ভার্চুয়ালি রাখা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে এক সাথে বোর্ডসমূহের পরীক্ষার ব্যবস্থা না করে বিকল্প পন্থায় একেকটি বোর্ড একেকদিন দু’ঘণ্টা করে মাঝখানে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে তিনটি পরীক্ষা ভার্চুয়ালি স্ব কেন্দ্রে অথবা বাসায় থেকে মিট গুগলের মাধ্যমে নিতে পারে। স্কুল-কলেজের দীর্ঘদিনের যে বিরতি থাকে, তা কমানোর জন্য ছুটি হ্রাস করা প্রয়োজন। একই সাথে প্রত্যন্ত গ্রামীণ স্কুল-কলেজের কাছাকাছিতেও মাস্কের সাথে সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্কুল-কলেজের নিকটবর্তী দোকানসমূহে সহজলভ্য করতে হবে। প্রতিটি ছেলেমেয়ে এদেশের নাগরিকÑতারা যাতে সুস্থ থাকে সেজন্যে দেশের জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় গুরুত্ব আরোপ করে চলেছেন। এজন্যই যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা যেন নিয়মনীতি মেনে চলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও সহজলভ্য করার প্রয়োজন রয়েছে। আবার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যখন যে ব্যাচ স্কুলে আসবে তাদের মধ্যে ১% করে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রয়োজন রয়েছে। কেননা যে সতর্কতার সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করতে যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও সহযোগী হিসেবে পেতে হবে। ইতোমধ্যে ১৮ বছর পর্যন্ত সকলকে টিকা দেয়া নিশ্চিত করা গেছে। আবার ১২ বছর পর্যন্ত টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য উদীয়মান রাষ্ট্র হলেও বিদেশ থেকে টিকা পাচ্ছি। এটি যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে প্রচলিত টিকাসমূহ ছোট শিশুদের জন্য কার্যকর কি না তা জানি না। কিন্তু ভারতে দুটো টিকা উৎপাদন কেন্দ্রে ৫ বছর থেকে ১১ বছর বয়সীদের টিকা উৎপাদন করে এখন পরীক্ষামূলক ট্রায়াল দিচ্ছে। যেহেতু ঘরে বসে বসে শিশুরা ক্লান্ত ও মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে, সেজন্যে বেসরকারি খাত থেকে ছোট শিশুদের জন্য টিকা ভারত থেকে আমদানি করার জন্যে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের যে সমস্ত ফার্মাসিউটিক্যালস আছে তাদের মধ্যে আগ্রহীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যৌথভাবে কথা বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে দেশে শিশুদের জন্য করোনা প্রতিরোধী টিকা আমদানি এবং প্রস্তুতকরণে এগিয়ে আসতে হবে। মডার্ন অ্যাসেসম্যান্ট পদ্ধতিতে অনেকগুলো অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে পরীক্ষা কেবল একটি উপাদান। অন্যগুলোর মধ্যে রয়েছে এটেনডেন্স, কেইস স্টাডি, প্রেজেন্টেশন, মব ফ্ল্যাস তৈরিকরণ, অ্যাসাইনমেন্ট, ভাইভা, সংশ্লিষ্ট বইয়ের ওপর রিভিউ করা প্রভৃতি। দুর্ভাগ্য যে, কেবল অ্যাসাইনমেন্টের ওপর জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো এদেশের কিছু চতুর ব্যবসায়ী আবার অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে দিচ্ছে-এটি তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ করছে। কোনো কোনো স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের বক্তৃতা ভিডিও রেকর্ডিং করছেÑ এতে ক্লাসে উপস্থিতির হার হ্রাস পেতে পারে। বিদেশি অনেক দেশে অবশ্য দেখেছি তাদের দেশে যে বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষা-প্রশিক্ষণের অভাব তারা সে বিষয়ে ভিডিও করে কিন্তু একই সাথে পর্যবেক্ষণ করেছি এর ফলে তোতা পাখির মতো অবস্থা হয়। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে স্বতঃস্ফূর্ত ভাব হ্রাস পায়। আবার অন্যদিকে দেখা গেছে দক্ষিণ কোরিয়াতে পদার্থ বিজ্ঞানে এক সময়ে তাদের দক্ষতা স্বল্প ছিল বলে তারা অনুভব করেছিল। তখন তারা তাদের স্বজাতি একজন প্রবাসীকে দেশে এনে তাকে দিয়ে পদার্থ বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেন এবং ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। তবে সবসময়ে যে এটি সব দেশে সফল হবে তা নয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে নারী শিক্ষায় আরো বেগবান করার জন্য পোশাক শিল্প খাতসহ শ্রমজীবী নারীদের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংকিং, রোবটিকস সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণার মডিউল তৈরি করে জ্ঞান-বিতরণের উদ্যোগ নিতে পারে আবার যারা বিদেশে নতুন বাজারে ব্লু কলার লেবার হিসাবে যাবেন তাদের জন্য ওই মডিউল এবং যে দেশে যাবেন সেদেশের ভাষা শিক্ষা উপরও গুরুত্ব আরোপ করে প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করতে পারে। আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীদের ভয় হচ্ছে ইংরেজি এবং গণিতে। এ দুটো বিষয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ভিডিও করে ছাত্রছাত্রীদের ওপর পাইলট করে দেখা যেতে পারে তাদের কতটুকু জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো সম্ভব হয়। যদি পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে সাফল্য হয় তবে তখন দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়। এদিকে হায়ার এডুকেশন টারটিয়ারী প্রজেক্টের আওতায় বর্তমানে যে কার্যক্রম প্রস্তুতির চেষ্টা চলছে তাতে কেবল মূলত ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করে আলোচনা করা হচ্ছে। অথচ দেশের মেডিকেল কলেজসমূহের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়নি। আবার ঢাকার ৭টি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়ন, সংস্কার নিয়ে হায়ার এডুকেশন টারটিয়ারী প্রজেক্টের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। সরকার দেশে সকলকে টিকার আওতায় আনতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে ধীরে ধীরে খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে- সংক্রমণের হার ৫% এর নিচে হলে এটি ভালো হতো। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ খোলার জন্য স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে। এক্ষণে যেগুলো ছোট বিশ্ববিদ্যালয় আছে, গণরুম নেই সেগুলো খুলে দেয়া ভালো। কিন্তু বৃহত্তর যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বুয়েট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো ধীরে ধীরে খোলা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু করোনাকালে অনলাইনে শিক্ষা হয়েছে সেহেতু দু-তিনটি সেমিস্টারের পরীক্ষা পর্যায়ক্রমিকভাবে নেয়ার জন্যে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট বিবেচনা করতে পারেন। আসলে সেশন জট অতিমারীর জন্যে সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষণে এই অতিমারীর কারণে সেশন জট যাতে ছাত্রছাত্রীদের মনঃপীড়ার সৃষ্টি না করে সেজন্যে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব যে সমস্ত সেমিস্টার কমপ্লিট করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা স্ব স্ব বিদ্যালয়ে করতে পারেন। এদিকে গণরুম যাতে চালু না হয় সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, দেশে সুষ্ঠু মানবসম্পদ গড়ার জন্যে বঙ্গবন্ধু সব সময় প্রয়াস নিয়েছিলেনÑ বর্তমান সরকারও চেষ্টা করছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্যে। এক্ষণে শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে, দেশের চাহিদা অনুপাতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বাংলাদেশ এডুকেশনাল ফ্রেইমওয়ার্ক তৈরির জন্য সরকারপ্রধান প্রয়াস গ্রহণ করলেও যাদের ওপর দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাক্রেভেন্সিয়াল কাউন্সিলকে আরো তৎপর হতে হবে। এদিকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণার অনেক মূল্য। অথচ আমাদের দেশে ইউজিসি, বাংলাদেশ গবেষণার র‌্যাংকিং করার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে যেভাবে ইউজিসি, ভারত জার্নালসমূহ র‌্যাংকিং করে থাকে আমাদেরও জার্নালসমূহের র‌্যাংকিংয়ের  কাজে ইউজিসিকে তৎপর হতে হবে। বর্তমানে দেখা যায়, মুখস্থ বিদ্যার ওপর ভর করে প্রিলিমিনারি বিসিএসের ব্যবস্থা করা হয়। অনেক ছাত্রছাত্রী জ্ঞান অর্জন করার বদলে বিসিএসের পরীক্ষা প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবে সৃজনশীলতা গড়ে হ্রাস পায়। পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমের স্টুডেন্টদের পক্ষে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হলেও তাদের উপযোগী প্রশ্ন বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে থাকে না। পিএসসির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করে বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে আসতে হবে। এ জন্যে পিএসসির একটি স্বচ্ছ ধারণাপত্র গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করে মেধাবীদের আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়োগ করা যায় সেজন্যে ব্যবস্থা করতে হবে। এতে যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছে তাদেরকেও ইংরেজি ভার্সনের মতো পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। আসলে পিএসসিকে বর্তমানে যুগোপযোগী করে সাজাতে হবে। উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে যে প্রয়াস তাতে অবশ্যই সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কেবল মুখস্থ বিদ্যা গ্রহণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, একই সাথে সৃজনশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফিজিক্যালি এবং অনলাইন উভয়ই চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি যেখানে প্রাকটিক্যাল বেশি রয়েছে সেখানে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা মানুষকে ভালোবাসেন বলেই শিক্ষা ও জীবনের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে ব্যস্ত। যাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হচ্ছে, তারা যেন সততা, নৈতিকতা, নিষ্ঠা ও মুক্ত চিন্তার সাথে কাজ করে থাকেন। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাস্তবতা মেনে দেশের প্রয়োজনে শিক্ষার মান উন্নয়ন দরকার। এক্ষেত্রে অবশ্যই কাঠামোগত সংস্কার করা দরকার। অতিমারীর কারণে আজ যেভাবে শিক্ষা খাত ব্যাহত হয়েছে, আমার বিশ্বাস যথাযথ পদক্ষেপ প্রতিটি স্তরে গ্রহণ করলে তবে আগামী দুবছরের মধ্যেই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে হবে। বিশ্বে হয়তো করোনা নিয়ে বসবাস করতে হবে এ জন্য সরকারিভাবে আমদানির পাশাপাশি বেসরকারি খাতে টিকা আমদানি করতে হবে। আবার ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদের টিকা পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরি হলে এদেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য অবশ্যই দেশে প্রতিষ্ঠিত ফার্মাসিউটিক্যালসকে উৎপাদনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকার যেমন বদ্ধপরিকর তেমনি মানুষের জীবন বাঁচাতেও বদ্ধপরিকর। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সামাজিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শিক্ষার্থীদের কাজ করতে হবে দেশকে ভালোবেসে। তাদেরকে মাদকমুক্ত থাকতে হবেÑ রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভালোমন্দের পার্থক্য নিজগুণে বুঝতে হবে।

লেখক: বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনোমিস্ট