প্রবাসীদের টিকায় অনিশ্চয়তা, গুনতে হচ্ছে ক্ষতি

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:০৬ | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:০৪

করোনা প্রতিরোধী টিকার এসএমএস পেয়ে মাকে নিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের টিকাদান কেন্দ্রে পরপর তিনদিন আসেন ফয়সাল আহমেদ। সবশেষ বুধবার এসেও টিকা নিতে পারেননি। সৌদি আরবের ভিসাসহ সবকিছু প্রস্তত থাকলেও ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু না হওয়ায় বিদেশ যেতে আগ্রহী এই যুবক টিকা নিতে না পেরে পড়েছেন সংকটে। কবে নাগাদ টিকা মিলবে সেই নিশ্চয়তাও দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে টিকাদান কেন্দ্রের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফয়সালের মা।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। তিনদিন ধরে কুমিল্লা দিয়ে আইতাছি আবার যাইতেছি। হাজার হাজার টাকা লাগতেছে। স্যাররা কইলো শনিবার ফোন করতে। যদি ফাইজারের টিকা দেয় তাইলে নাকি পোলায় নিতে পারবে।’

বুধবার দুপুরে যখন ফয়সালের সঙ্গে এ প্রতিবেদক কথা বলার সময় পাশে দাঁড়ানো কয়েকজন যুবক এগিয়ে এসে জানান তাদেরও টিকা নিতে সমস্যার কথা। কেউ নিবন্ধন করেছেন একমাস আগে কিন্তু এখনো এসএমএস পাননি। কেউ আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কায় দ্রুত টিকা নেয়া যায় কি না সে জন্য চেষ্টা করছেন। সৌদি আরব ছাড়াও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে টিকার অপেক্ষায় আছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত (উপ-পরিচালক) অধ্যাপক ডা. খোরশেদ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হয়নি তাই প্রতিদিন যেসব প্রবাসী সমস্যা নিয়ে আসছেন তাদের কোনো সমাধান দিতে পারছি না। যতক্ষণ না এই টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত না দেবে ততক্ষণ আমরা নিরুপায়।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশ যেতে চান যারা তাদেরই সমস্যা বেশি। কেউ মেসেজ পাননি, কেউ আবার মেসেজ পেলেও টিকা পাচ্ছেন না এমন লোকজন বেশি আসছেন। আবার এক কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু এই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসছেন। প্রতিদিনই অনেক প্রবাসী টিকা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসছেন।’

একই কেন্দ্র কথা হয় সুমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি দশ বছর কাতার ছিলেন। করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে একাধিকবার ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ইচ্ছা থাকলেও দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘৮ আগস্ট রেজিস্ট্রেশন করেছি। কেন্দ্র ছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল। কিন্তু এই জায়গায় টিকা দিচ্ছে না। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গেলাম। ওখান থেকে বললো এই কেন্দ্র থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে যেতে পারলে টিকা নেয়া যাবে। এখানে এসে তো কাউকে পেলাম না।’

তিনি বলেন, ‘টিকা না নিয়ে গেলে ১৪ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এতে ১ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। আর টিকা নেয়া থাকলে ২ দিন কোয়ারেন্টাইন করলে হবে। কিন্তু এই টাকা কে দেবে।’

সৌদি আরবগামী চাঁদপুরের শাহ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার ভিসার মেয়াদ আছে ৪২ দিন। মেসেজ পাইয়া টিকা নিতে আইলাম। আরো এক সপ্তাহ পর খোঁজ নিতে বলছে। ভিসার মেয়াদের মধ্যে দুই ডোজও তো নিতে পারবো না।’

গত ১ সেপ্টেম্বর দেশে নতুন করে ফাইজারের দশ লাখ টিকা এসেছে। কিন্তু সেই টিকা কবে নাগাদ দেয়া হবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকা কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কবে থেকে ফাইজারের টিকা দেয়া হবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ কবে নাগাদ শুরু হতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে বিষয়ও এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’ তিনি জানান, আগে সুযোগ থাকলেও এখন এক কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করে অন্য কেন্দ্রে টিকা নেয়ার সুযোগও নেই।

কত টিকা এসেছে

এখন পর্যন্ত চীনের কাছ থেকে কেনা, উপহার ও কোভ্যাক্স থেকে এক কোটি ৯১ লাখ ৬৫ হাজার ২৫০ ডোজ টিকা বাংলাদেশে এসেছে। এছাড়া ভারতের উপহার হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে ৩৩ লাখ। একই টিকার ৭০ লাখ ডোজ এসেছে সেরামের কাছ থেকে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ৫৫ লাখ, ফাইজারের ১১ লাখ ৬২০ ডোজ এবং জাপান থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৭ ডোজ টিকা এসেছে।

কত টিকা দেয়া হয়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ১৩ হাজার ৭৩০ ডোজ। এর মধ্যে (মঙ্গলবার পর্যন্ত) ৩ কোটি ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩২০ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ৭৩ লাখ ১৬ হাজার ৪১০ ডোজ টিকা মজুত আছে। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪১ হাজার ২৯২ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ২৮ জন। আর মঙ্গলবার পর্যন্ত টিকার নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার ২৪১ জন।

এসএমএস পেতে বিলম্ব কেন

প্রবাসীসহ করোনার টিকা পেতে আবেদনকারীদের এসএমএস পাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের ভাষ্য, অনলাইনে সক্ষমতার চেয়ে বেশি নিবন্ধন হওয়ায় মোবাইল ফোনে এসএমএস পেতে সমস্যা হচ্ছে।

বুধবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরে মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, যেসব টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেসব কেন্দ্রের ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি নিবন্ধন করা হয়েছে। যার কারণে মোবাইল ফোনে এসএমএস পেতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সমাধান করতে।’

(ঢাকাটাইমস/০৯সেপ্টেম্বর/বিইউ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু

ঢাকায় কর দিয়ে ২৬৮০ বিয়ে 

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :