বছরের ৬ মাসই পানিবন্দি থাকে গ্রামটির মানুষ

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৩৯ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৪২

মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৫ নম্বর বানা ইউনিয়নে বানা নামে রয়েছে সাতটি গ্রাম। এর মধ্যে অবহেলিত ছোট্ট একটি গ্রামের নাম চরবানা। উপজেলা সদর থেকে গ্রামটির দূরত্ব মাত্র সাত কিলোমিটার। আয়তনও ছোট। ২২০টি পরিবারের বসবাস। লোকসংখ্যা হাজার দেড়েক।

এ গ্রামটিতে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে একেবারে পিছিয়ে রয়েছে গ্রামটি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টের অভাবে ১২ মাসের ছয় মাসই পানিবন্দি থাকতে হয় এ গ্রামের বাসিন্দাদের। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলতেও নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

গ্রামের প্রবেশপথে একটি সেতু থাকলেও দুপাশে নেই পাকা সংযোগ সড়ক। তবে কাঁচা রাস্তা রয়েছে। তা-ও অনেক নিচে। শুকনো মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা হয়। আর অতিবৃষ্টি হলে পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি প্রায় পাঁচ ফুট পানির নিচে থাকে। এতে সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় সড়কবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। তাই ঘর থেকে বের হতে নৌকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না এই পথে চলাচলকারীদের।

গ্রামটিতে নেই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এজন্য শিক্ষার হার খুবই কম। নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই গ্রামের মানুষ। ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ সুবিধাটুকুও পায় না তারা। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামোর সন্তোষজনক উন্নয়ন না হওয়ায় গ্রামবাসী চরম ক্ষুব্ধ।

চরবানা গ্রামবাসীর অভিযোগ, গ্রামটি সব ধরনের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতোটাই খারাপ যে অন্য এলাকার মানুষ এ গ্রামে আত্মীয়তা পর্যন্ত করতে অনীহা প্রকাশ করেন। 

গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রসুল আক্ষেপ করে বলেন, ‘শুনি বাংলাদেশ ডিজিটাল। কিন্তু আমরা উন্নয়ন আর ডিজিটালের বাইরে। মাসের পর মাস আমরা পানিবন্দি থাকি। স্বাধীন দেশে বাস করেও স্বাধীনভাবে চলতে পারি না।’

নজরুল শেখ নামে আরেকজন বলেন, বর্ষায় গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার কারণে আমরা কষ্টে থাকি। যাতায়াতের খুব সমস্যা হয়। ঘর থেকে বের হতে হলে নৌকা ছাড়া উপায় নেই। বছরের ছয় মাস ধরে পানিবন্দি থাকতে হয়।

স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় বর্ষার সময়। মানুষ চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, বছরের ছয় মাস ফসলি জমিতে পানি থাকে। তাই কৃষি কাজের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। জমিতে ঠিকমতো ফসলও ফলাতে পারি না। আমরা খুব কষ্টে আছি।

এ ব্যাপারে বানা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. রাজ ইসলাম খোকন বলেন, ‘গতবছর রাস্তাটির কিছু অংশে মাটি দিয়ে উঁচু করা হয়েছিল। কিন্তু রাস্তাটি অনেক নিচু। এ কারণে মাটি দিয়ে কোনো কাজে আসেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গ্রামবাসীর কষ্টের কথা জানিয়েছি। সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছেন। রাস্তাটি দ্রুত চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান বলেন, রাস্তাটি এমপি নিজে পরিদর্শন করেছেন। আগামী শুকনো মৌসুমে রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে আশা করছি।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/কেএম)