তালেবান নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য!

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 

আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের নেতাদের মধ্যে বড় ধরনের মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে একজন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যের বাকবিতণ্ডাও হয়েছে। তালেবানের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই খবর পাওয়া যাচ্ছিল, যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জনসমক্ষে দেখা যায়নি মোল্লা বারাদারকে। তালেবানের কর্মকর্তারা বরাবরই এসব তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন।

গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটিকে 'ইসলামিক আমিরাত' বলে ঘোষণা করে। তারা যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে সবাই পুরুষ এবং জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতারা রয়েছেন। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব হামলার অভিযোগ রয়েছে।

তালেবানের একটি সূত্র বিবিসি পশতুকে জানিয়েছে, বারাদার এবং শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানির মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বাক্য বিনিময় হয়েছে। তখন সেখানে থাকা তাদের অনুসারীরাও পরস্পরের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। খলিল উর-রহমান হাক্কানি আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

তাদের সাথে সম্পৃক্ত কাতার-ভিত্তিক একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতা নিশ্চিত করেছেন যে, গত সপ্তাহেও একবার তর্কবিতর্কের তৈরি হয়েছিল। সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেখানে বিতণ্ডার তৈরি হওয়ার কারণ হলো নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন নিয়ে সন্তুষ্ট নন বারাদার।

তারা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ে কৃতিত্ব কার হবে, সেই নিয়েই বিরোধের শুরু। বারাদার মনে করেন যে, তার মতো যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়েছেন, কৃতিত্ব তাদের। তবে তালেবানের অন্যতম জ্যেষ্ঠ একজন নেতা পরিচালিত হাক্কানি গ্রুপের সদস্যদের মত, যুদ্ধের মাধ্যমে তারা এই বিজয় পেয়েছেন।

প্রথম তালেবান নেতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে বারাদারের। ২০২০ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে তিনি স্বাক্ষর করেন।

সেই সময় আফগান বাহিনী ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাক্কানি নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। এই গ্রুপকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন বলে তালিকাভুক্ত করেছে। তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এই দলের নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।

তালেবান সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে যে, বিতণ্ডার পর বারাদার কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং কান্দাহারে চলে গেছেন। সোমবার প্রকাশ হওয়া বারাদারের একটি অডিও বার্তায় তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি একটি সফরে রয়েছেন।

অডিওবার্তায় বারাদার বলেন, 'আমি এই মুহূর্তে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সকলে ভালো আছি।'

বেশ কয়েকটি তালেবান ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এই অডিও বার্তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে তালেবান বলে আসছে যে, তাদের মধ্যে কোন বিতণ্ডা নেই এবং বারাদার নিরাপদে আছেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কি করছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

একজন মুখপাত্র বলেছেন, তালেবান সুপ্রিম লিডারের সঙ্গে দেখা করতে বারাদার কান্দাহারে গিয়েছেন। আবার পরবর্তীতে বিবিবলেছেন যে, তিনি 'ক্লান্ত এবং বিশ্রামে থাকতে চান'।

অনেক আফগান মনে করেন, তালেবানের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০১৫ সালে এই গ্রুপটি স্বীকার করেছিল যে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমরের মৃত্যুর খবর দুই বছর পর্যন্ত গোপন করে রেখেছিল। সেই সময় দলটি তার নামে অব্যাহতভাবে বিবৃতি প্রচার করে গেছে।

কখনোই জনসমক্ষে না আসা তালেবানের সুপ্রিম লিডার হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে নিয়েও নানারকম জল্পনা রয়েছে। তালেবানের রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় সকল বিষয়ের প্রধান আখুন্দজাদা।

তবে শেষ পর্যন্ত তালেবান কোন পদক্ষেপ নেবে বা সরকারের প্রধানরা কবে ক্যামেরার সামনে হাজির হবে সে বিষয় এখনো অনিশ্চিত।

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/একে