ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র অণুকাব্য (দ্বাদশ কিস্তি)
১. অফুরান ভাণ্ডার
তোমার ধনের ভাণ্ডার এতোই বিশাল, এতো অফুরান,
মুক্ত হস্তে আমাকে দিলে তোমার ভাণ্ডারে পড়বে না টান।
তবু তুমি হও না কেনো এতোটা উদার, এতো অকৃপণ?
পরীক্ষায় পাশ করবার শক্তিও তো দিলে না তেমন।
২. কল্যাণকর প্রাপ্তি
আমি যতো কিছু চাই;
তা-ই তুমি অকাতরে করিও না দান,
সে চাওয়াই করো পূরণ;
যে পাওয়ার মাঝে আমার
আছে কল্যাণ।
৩. জীবনের জঞ্জাল
জীবনের এক ফোঁটো তালি মারতেই
আরো আট দশ ফোঁটোর দেখা জোটে,
তালি মারার এই কসরত শেষ না হতেই
আমার মরদেহ পালঙ্কে ওঠে।
৪. ক্ষমতার সসীমতা
তুমি আমায় যতোই বোঝাও, জানি আমি বুঝবো না তা,
কারণ তোমায় বোঝার মতো দাওনি আমায় সেই ক্ষমতা।
তোমায় বোঝার সেই ক্ষমতা আমায় যদি দিয়েই দিতে,
কমতি কি আর পড়তো তোমার জ্ঞানের বিশাল জলধিতে?
তোমার সকল রহস্য ভেদ করে আমায় দাও না দ্যোতি!
তোমার সবই জানলে আমি তোমার তাতে কী বা ক্ষতি?
৫. অপূর্ব দণ্ড
দয়াল তুমি দয়া করে এমনি দন্ড দিলে!
ঘামের নহর বইলে তবেই অন্নদানা মিলে।
৬. মানুষ হও
এখন বিষাদের ভার সবার অন্তরে,
একান্তে কেবল শোকের অশ্রু ঝরে।
মুষ্যত্ব থাকে যদি তোমার ভেতরে,
খাদ্য দাও, পথ্য দাও,
সহমর্মের আশার মোড়কে ভরে;
স্বপ্ন ও আনন্দ বিলাও
বিপন্ন মানুষের ঘরে ঘরে।
৭. বিফল বিশ্বকর্মা
বিজ্ঞরা বলেন, মানুষও এক রকমের পশু।
তবে আশা ছিল মানুষ মানবিক হবে
আর পশু হবে পাশবিক।
কিন্তু বাস্তবে তা হলো না।
বিশ্বকর্মার আশাও ফলবে না;
তা কেমন করে হয়!
স্বাভাবিক এই প্রশ্ন আমার মনেও হচ্ছে নিত্য উদয় ।
৮. পরমের বুকে ঠাঁই
তোমার বুকের মধ্যিখানে,
আমায় এমন নিবিড় করে
জড়িয়ে রাখো আলিঙ্গনে;
যেন সারা সৃষ্টিজগৎ
থাকতে পারে
এই দু’বুকের সন্ধিক্ষণে।
সবার যদি ঠাঁই না মিলে তোমার বুকের সিংহাসনে?
লাভ কী এতো আড়ম্বরের আয়োজনে?
৯.গন্তব্য
আর কদ্দুর দুস্তর পথ পাড়ি দিলে,
পৌঁছানো যাবে কাঙ্খিত মঞ্জিলে!
সেই ভাবনায় পান্থ যখন ক্লান্ত শরীরে ঝিমায়,
ঈশ্বর এসে কানে কানে বলে,
পায়ে ভর করে আবার দাঁড়ালে
পৌঁছুবে এবার পথান্ত সীমানায়।
পান্থ তুমি ক্ষান্ত হয়ো না
চোখ মেলে দেখো এক পলক:
ঐ তো সীমান্ত মাইল ফলক।