‘প্রেমিককে যে বন্দি করে নেই তো কোথাও সে জেলখানা’

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৫৭ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৩৪

মোহাইমিনুল ইসলাম

দেড় বছর পর স্কুল খুললো; প্রথম দিনে আমার কর্মক্ষেত্র তিনজন স্কুল ছাত্রীর পলায়নের খবর পায়!

তিনজনের গল্প তিন রকম।

একজন টেনে টুনে ক্লাস টেনে উঠেছে। যথারীতি ক্লাস ছাড়া এক ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে আসে। তাদের খানদানি পরিবারে জীবনে এমন হয়নি- এই মর্মে রীতিমতো মর্মস্পর্শী ভাষণ দিয়ে এবং মেয়েকে শাসন করার ওয়াদা দিয়ে মামলা ছাড়াই দু'পক্ষ বাসায় যায়।

বাসার একমাত্র মেয়ে সবার আশার গুড়ে বালি দেয় আরেকবার; এবার ছাদে কাপড় নাড়তে গিয়ে ছাদ থেকে ছেলের পানে হাতও নাড়ে; অতৎপর ছাদ থেকে লাফিয়ে ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায়! এবার কর্তৃপক্ষ প্রিপেইড সিস্টেমে আগে অপহরণের মামলা দেয়; তবু মেয়েকে চাই তাদের।

পুলিশ আরেকবার ধরে নিয়ে আসে এই লাইলী-মজনুদের!

মেয়েকে যথারীতি কোর্টে জবানবন্দি দিতে পাঠায় পুলিশ; লাইলী জবান নিজের মাঝে বন্দি রেখে এই ছেলেকে ছাড়া বাঁচবে না মর্মে তার এক জবান প্রকাশ করে। ওদিকে ছেলে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে।

যাহোক, স্কুল খোলার প্রথম প্রহরে সে তার প্রেমিক আদমের সাথে এলাকা থেকে আবার হাওয়া হয়ে যায়। বাচ্চাকালে গান শুনেছিলাম ‘প্রেমিককে যে বন্দি করে নেই তো কোথাও সে জেলখানা।‘ নিজের জীবনে না বুঝলেও পুলিশি জীবন মিলিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছু!

দ্বিতীয় জনও ক্লাস টেনেই পড়ে, ছেলে ক্লাস ফোর থেকে ড্রপড আউট হওয়া একজন রং মিস্ত্রি। ছেলের জীবনে কোনো রং নেই; বাবা-মা নেই, নানার বাড়ি মানুষ হয়েছে!  রং কতটুকু কোথায় কি করেছে কে জানে? তবে মেয়েটির মনে যে রং সে ধরাতে সক্ষম হয়েছে তা সহজে মলিন হয়নি। তাই এই ছেলের হাত ধরে রঙিন জীবনের আশায় সে নিজেকে অথৈ জলে ভাসায়। কিছুদূর গিয়ে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে খালাকে ফোন করে গর্বের সাথে আবার বলেছে, ‘খালা, আমি হৃদয়ের সাথেই যাচ্ছি।‘ কবিগুরু এমনই কোনো অনুভূতি থেকে হয়ত লিখেছিলেন, ‘হৃদয় আমার নাচেরে, নাচেরে...!’ এদেরও আপাতত ফিরিয়ে আনা হয়েছে! হৃদয়ের নাচ আপাতত বন্ধ!

তৃতীয় মেয়েটি মাত্রই পালিয়ে গেছে বলে জানা গেল! এই সিনেমার নাম পর্দায় উঠছে কেবল। ধরে এনে গল্প শুনতে হবে। তারপর সময় থাকলে শোনাব হয়ত... 

স্কুল খুলেছে। স্কুলে স্কুলে গিয়ে এদের এমন পালানো পালানো খেলার বিরুদ্ধে  মোটিভেশন দেওয়া কি ঠিক হবে? নাকি পাগলকে সাঁকো নাড়াতে নিষেধ করার মতো হবে?

লেখক: মোহাইমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/এসকেএস