আমিষের চাহিদা পূরণ করতে ‘মানবিক’ ছাগল চোর

মোহাইমিনুল ইসলাম
| আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৪৪ | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:১৩

একটা লেগুনার (দেশি ছইযুক্ত করিমন) যাত্রী সবাই। চিরস্থায়ী যাত্রী। কেউ নামে না, ওঠেও না তাদের এই লেগুনায়। শুধু মাঝে মাঝে দু-একটা ছাগল তাদের লেগুনাতে ওঠে। তাদের ভ্রমণ শুরু হয় সকাল বেলায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই ভ্রমণজনিত পরিশ্রম! ড্রাইভারসহ এই স্থায়ী যাত্রীদের সবাই সবাইকে চিনে, তাদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। তারা জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়ায়। কি, অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন দেশের পর্যটন খাত এত এগিয়ে গেছে যে, লেগুনায় চড়ে বিশ্বভ্রমণ করছে?

না, এরা আন্তঃজেলা সংঘবদ্ধ ছাগল চোর চক্র! যাত্রীবেশে পুরুষ-মহিলা এমনভাবে চলে যেন কেউ সন্দেহ না করে। এরপর রাস্তায় একটু নির্জনে বা যেখানে সবাই ব্যস্ত এমন স্থানে মালিক ছাড়া ছাগল হাঁটাহাঁটি করলে তার ওপর তাদের নজর পড়ে। গাড়ি থামিয়ে একজন একটু বাহানা করে নিচে নামে, তারপর টুপ করে ছাগলটা তুলে গাড়িতে নেয়। দিন শেষে ছাগল বিক্রি করার নির্দিষ্ট ক্রেতা, কসাই আছে এদের। কী সুন্দর পরিকল্পিত শিল্পকর্ম, যা কল্পনা করাই মুশকিল! শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান থানার হাজতে হলো। মহেশপুর উপজেলায় তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে তাদের হাজতের পথ ধরায় পুলিশ।

তাদের সাথে কথা হচ্ছিল, সবাই কিঞ্চিত বিমর্ষ, ভাষাহীন; প্রশ্নের উত্তরে ভাবলেশহীন। সাধারণ মানের প্রশ্ন করে ভাইভাবোর্ডের পরিবেশ হালকা করা হলো, আগে মুখ খোলা হলো। তাতে জানা গেল যে, তারা সবাই দেশপ্রেমিক। নিজ জেলায় তারা কখনো চুরি করে না; তবে নিজ জেলায় ফিরে কম দামে পরিচিত কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে ও এলাকার মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া তারা খুবই নীতিবান; ছাগল ছাড়া কিছুই নেয় না। এমনকি ভেড়া, মুরগি, হাঁস, গাড়ল, বাছুর এসবের প্রতি লোভ নেই।

ছাগলপ্রেমী এই চৌকস দলকে এবার আরো গোপনীয় কিছু বিষয় জিজ্ঞেস করলে তারা দক্ষতার সাথে অভিনয় শুরু করলো, কিছুই জানে না এমন অভিনয়। তাদের পাশেই দাঁড়ানো দুই এসআই; পাশে বসা থানার অফিসার ইনচার্জ। ওসি সাহেবকে বললাম, "এই এসআই অমুক তার চোখ এমন করছে কেন? তার এত হাত নিশপিশ করবে কেন? তাকে তো বলে দিয়েছি পুলিশ এখন মারধর করা ছেড়ে দিয়েছে! ওকে ভালো হয়ে যেতে বলবেন। আমি চলে গেলে কি যে করে আল্লাহ জানে, ওর তো রেকর্ড ভালো না, চান্স পেলেই সাপ মারার মতো মানুষ মারে নাকি, অনেক কমপ্লেইন! "ওসি বলেন, "ঠিক বলছেন স্যার, সেদিনও একজন সত্য কথা না স্বীকার করায় তার সে কি মাইর। চিৎকারে থানা কম্পিত হচ্ছিল, পরে সব গল্প স্বীকার করে সেই চোর আমাদের শব্দ দূষণ হতে বাঁচিয়েছে, নাহ খুব টেনশনে থাকি! "

আচ্ছা যাহোক, এসব শুনে যেটার চোখে বেশি উৎকন্ঠা দেখলাম সেটাকে আরেকটা প্রশ্ন করে কিছু উত্তর এবার পাওয়া গেল। এভাবে কূটনৈতিক উপায়ে সম্পূর্ণ হাতের ছোঁয়া ছাড়াই ভালো কিছু তথ্য পাওয়া গেল যা তদন্তের স্বাস্থ্যের জন্য উপাদেয় হবে, বিচারের জন্য সুবিধাজনক হবে।

চোরচক্র ধরা পড়ায় একটা উচ্চ আমিষ চক্র নষ্ট। এটাই এখন মানবিক পুলিশের কষ্ট! সেখানে এদের প্রতিবেশীরা মাছ খাওয়া শুরু করতে পারে। বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়; এছাড়া ক্ষতিকর চর্বিমুক্ত।

লেখক: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :