মাশরুম খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৩৭

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

মাশরুম একপ্রকার ক্লোরোফিলবিহীন ছত্রাক জাতীয় অপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি ছত্রাকের বা ইউমাইসেটিসের অন্তর্ভুক্ত । এতে সবুজ কণা নাই বিধায় সবুজ কণাযুক্ত উদ্ভিদের মতো নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। সে কারণে খাদ্যের জন্য এরা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ বস্তুর ওপর নির্ভরশীল।

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাশরুমের বিপ্লব ঘটলেও অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই খাবারটি এখনও বাংলাদেশের জনমানুষের খাবার মেনুতে জায়গা দখল করে নিতে সক্ষম হয়নি।

 

মাশরুমের কদর রয়ে গেছে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতন মানুষ, অভিজাত রেস্টুরেন্টের খাবার মেনুতে ও বিভিন্ন ঔষধ, প্রসাধনী শিল্পের উপকরণ হিসেবে।

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ও বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন এবং মিনারেলের ভুমিকা অনেক বেশি। আমাদের দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা যেসব নামীদামী খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেয়ে থাকি তার তুলনায় মাশরুমে বেশি প্রোটিন রয়েছে। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত মিনারেল ও প্রোটিন না থাকলে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করে যায় ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি মাশরুমে থাকা এরগোথিওনেইন মানব দেহের ঢাল হিসেবে কাজ করে।

 

মানুষের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হতে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তা না হলে শরীরে বাসা বাঁধে নানা রকম রোগ। মাশরুম পলিফেনল ও সেলেনিয়াম এর উৎস যাতে থাকে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলোর গুণ জীবনঘাতী কিছু রোগ যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ ও ক্যানসার থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। এতে উপস্থিত সালফার ইমিউনিটি বুস্ট করে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত মাশরুম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে মাশরুম একটি উচ্চমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে প্রায় ২৩-৩৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে যেখানে ১০০ গ্রাম মাংসে ২২-২৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ও সেলেনিয়াম। এছাড়াও এতে রয়েছে এরগোথিওনেইন নামক এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি-১২, ফাইবার ও এনজাইম। এতে কার্বো-হাইড্রেটের পরিমাণ খুবই সামান্য।

 

মাশরুমে পলিফেনল, সেলেনিয়ামণ, এবং সালফার নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। মাশরুমের প্রোটিনে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অনেক অল্প। এতে কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান-লোভস্ট্রাটিন, অ্যান্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরে কোলেস্টেরল জমতে পারে না। বরং মাশরুম খেলে শরীরে জমে থাকা কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায়।

 

মাশরুম শুধু সুস্বাদু খাবারই নয়, এতে রয়েছে পুষ্টিগত গুণও। খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন ছত্রাক পরিবারের মাশরুমকে। স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন রয়েছে এই সুপারফুডের। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে উপকারী মাশরুম। এর জৈব উপাদান ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমারের ঝুঁকি কমায়।

 

হার্টের রোগের ক্ষেত্রেও সুরক্ষা দেয়। মাশরুমে রয়েছে পটাসিয়াম, ফাইবার ও এনজাইম। এইসবের উপস্থিতি কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। মাশরুমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বেটাগ্লুকান, প্রোটিন ও ভিটামিন। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। যা ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটায়। এছাড়া হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে মাশরুম।

 

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাবার ক্ষতিকারক। ফ্যাট ও শর্করা কম এবং আঁশ বেশি থাকায় বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মাশরুম বিশেষ উপকারী ও ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার। নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমিয়ে আনা সম্ভব।

 

মাশরুমের বেটা-ডি, ল্যামপট্রোল, টারপিনয়েড ও বেনজো পাইরিন আছে যা ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধ করে। সম্প্রতি জাপানের জাতীয় ক্যানসার ইনষ্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মাশরুমের ক্যানসার প্রতিহত করার ক্ষমতা আছে।

 

মাশরুমে নিউক্লিক এসিড ও এন্টি-এলার্জেন থাকায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় কিডনি রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক।

 

মাশরুমে ট্রাইটারপিন থাকাতে বর্তমানে এটি বিশ্বে এইডস প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

মাশরুমের খনিজ লবণ চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষার জন্যও সমাদৃত।

 

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, লৌহ এবং লিংকজাই-৮ নামক এমাইনো এসিড থাকায় হেপাটাইটিস-বি ও জন্ডিসের প্রতিরোধক।

 

অনেক গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে ভ্রূণের স্বাস্থ্য ভালো বা উন্নতির জন্য ফলিক এসিড বা ফোলেট  এর পরিপুরক খবার গ্রহণ করে থাকে। তবে মাশরুমেই এই সকল উপদান রয়েছে। ফুড ডেটা সেন্ট্রাল সার্চ রেজাল্ট-এর তথ্য মতে এক কাপ কাঁচা মাশরুমে ১৬.৩ মাইক্রোগ্রাম ট্রেডেড সোর্স ফোলেট থাকে।

 

(ঢাকাটাইমস/১৬ সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)