এক কারখানার কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা যানজট

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৩৫ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:১৪

একটি গার্মেন্টসের কারণে দেশের অন্যতম প্রধান ও ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিনে প্রায় চার ঘণ্টা অচল থাকে। ফলে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয় লাখো যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের। তবে আল মুসলিম গার্মেন্টস নামের ওই প্রতিষ্ঠানের দাবি, তাদের কর্মীতের কারণে যতটা ভোগান্তি তার চাইতে বেশি ভোগান্তি ইউটার্নের কারণে।

জানা গেছে, সাভারের উলাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত আল মুসলিম গার্মেন্টসে কাজ করে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী। এসব কর্মীর কাজে যাওয়ার সময় এবং কাজ শেষে গার্মেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় দেশের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই গার্মেন্টে সকালে দুই শিফটে কর্মীরা প্রবেশ করে এবং বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তিন শিফটে কাজ শেষে বের হয়। এর মধ্যে সকাল সাতটা ও আটটায় কর্মীরা কাজে প্রবেশ করেন। আর বিকেল পাঁচটা, রাত আটটা এবং রাত সাড়ে নয়টা- এই তিন শিফটে কাজ শেষে বের হন। এই পাঁচ সময়ে উলাইল এলাকায় আটকে পড়ে যানবাহন। ওই সময়ে যানজট মহাসড়কের উভয় পাশে কখনো কখনো দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত চলে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, গার্মেন্টস যখন ছুটি হয় তখন গার্মেন্টসের নিরাপত্তাকর্মীরা মহাসড়কে ফিতা ধরে অথবা লাল পতাকা দেখিয়ে যানবাহন আটকে কর্মীদের সড়ক পার করে দেয়। প্রতিবার ছুটির সময় কয়েক দফায় তারা এই পদ্ধতিতে যানবাহন আটকে রাখে। আবার এইসব কর্মীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে প্রায় অর্ধশত গাড়ি সিরিয়াল দিয়ে গার্মেন্টেসের এর অপর পাশের লেনে (ঢাকা থেকে সাভারমুখী) দাঁড়িয়ে থাকে। এই গাড়িগুলো মহাসড়কে দাঁড়ানোর জন্য উলাইলে ইউটার্ন নেয়। গার্মেন্টেস ছুটির প্রায় আধা ঘণ্টা আগে থেকে এখানে ইউটার্ন নেওয়ার চাপ বেড়ে যায়। আবার ছুটি শেষে গার্মেন্টসের সব কর্মী ধাপে ধাপে বের হয়। এতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ফলে তাদের বহনকারী গাড়িগুলোও একদম শেষ পর্যন্ত মহাসড়কের ওপরই দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে ছুটির আগে-পরে মিলিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা এই মহাসড়ক অচল হয়ে পড়ে।

চন্দ্রা থেকে মিরপুর রুটে বাস চালান মো. ইমরান। প্রতিদিন তিনি একবার হলেও এই উলাইল এলাকায় জ্যামে আটকা পড়েন। তিনি বলেন, প্রতিদিন একবার-দুবার এই হানে জামে পড়ি। একটা ওভারব্রিজ কইরা দিলেই পারে। হ্যাগো (আল মুসলিম গ্রুপ) তো আর ট্যাহার অভাব নাই। তাইলেই আর আমাগো বইয়া থাকতে হয় না।’

তবে মহাসড়কের এই জ্যামের পুরো দায় নিজেদের কাঁধে নিতে নারাজ আল মুসলিম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু তাদের কর্মীদের রাস্তা পারাপারের জন্য জ্যাম লাগে না। গাড়িগুলো যে ইউটার্ন নেওয়াও জ্যামের অন্যতম কারণ।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফরাহদা হেসেন বলেন, কর্মীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আল মুসলিমের সামনে ফুট ওভারব্রিজ করার জন্য সড়ক ও জনপথসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তেমন সাড়া মিলছে।

তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (ঢাকা সড়ক বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আর মামুন বলেন, ‘একটি মহাসড়কের পাশে কীভাবে এত বড় একটি গার্মেন্ট হয় সেটাই আমার মাথায় আসে না। আবার তাদের সব গাড়ি মহাসড়কের ওপর রাখা হয়, আমাদের কোনো কথাই তারা শোনে না।’

তিনি জানান, মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে ফুট ওভারব্রিজ করা হবে। তখন কোনো গাড়িই মহাসড়কের ওপর দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে কথা তুলতেই বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বলে জানান সাভার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল গণি। বিষয়টির সমাধান করতে জেলা পরিষদের সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হলেও তেমন ফলাফল আসেনি। আবার গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষও মাথা ঘামাতে নারাজ।

তিনি বলেন, ‘তাদের ভেতরে অনেক জায়গা আছে, তারা চাইলেই গাড়িগুলোকে ভেতরে রাখতে পারে, কিন্তু সেটি তারা করছে না। আবার নিজেরা ওভারব্রিজও করছে না।’

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :