আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে ২০ কোটি টাকা নিয়ে নামছে ডিএসসিসি

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৫০ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:২১

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

ঢাকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে কামরাঙ্গীরচরের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে আদি বুড়িগঙ্গা। তবে বয়ে চলেছে বলা হলেও এখানে জলের প্রবাহ দেখা যায় না। যত দূর দৃষ্টি যায়, শুধু ময়লা আর অবর্জনা। জায়গায় জায়গায় দখল, গজিয়ে উঠেছে কাঁচাপাকা অবৈধ স্থাপনা।

এই মরণদশা থেকে আদি বুড়িগঙ্গাকে পুনরুদ্ধার করতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। দক্ষিণ সিটি এই বাজেটের নাম দিয়েছে ‘উন্নত ঢাকার ভিত রচনার বাজেট’।

আদি বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে ডিএসসিসি এরই মধ্যে কিছু পরিকল্পনা করেছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, আদি বুড়িগঙ্গার সীমানা নির্ধারণ।

এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচরকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে চায় দক্ষিণ সিটি। এরই অংশ হিসেবে ডিএসসিসির প্রথম আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার গড়ে উঠতে পারে এই কামরাঙ্গীরচরে। চরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা ও কেন্দ্র গড়তে চায় নগর কর্তৃপক্ষ।  

ডিএসসিসি আশা করছে, প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা থাকায় আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধার করতে সব বাধা ডিঙানো সম্ভব। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনার কার্যক্রম চলছে।

২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় আদি বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখনকার মেয়র সাঈদ খোকন না পারলেও বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধার ও সেখানে নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছেন।

গত ২২ জুন বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে দখলমুক্ত হওয়া জায়গায় প্রতি ৫০ মিটার পরপর সীমানা পিলার স্থাপন করে দক্ষিণ সিটি। এর মাধ্যমে মোট ৪৫০ মিটার সীমানা পিলার স্থাপন করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।

কামরাঙ্গীরচর বুড়িগঙ্গার বুকে জেগে ওঠা একটি চর। সেখানে রয়েছে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। জায়গাটি এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ।

বেড়িবাঁধ আর চরের মধ্যবর্তী জায়গায় বুড়িগঙ্গার একটি চ্যানেল ছিল আদি বুড়িগঙ্গা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আদি বুড়িগঙ্গা আধমরা বুড়িগঙ্গায় রূপ নিয়েছে। স্থানীয়দের দখল আর দূষণে পানির প্রবাহ খুঁজে পাওয়া দায়।

আদি বুড়িগঙ্গার বর্তমান অবস্থা

সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ সিকসনের (হাতির ঘাট) বিপরীতে কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেট এলাকা। বেড়িবাঁধ থেকে চরে ঢুকতে হয় ছোট একটি সেতু পার হয়ে। প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ সেতুর নিচে তাকালে এখন আর পানির প্রবাহ দেখা যায় না। এমনকি সেতু থেকে দুই পাশে তাকালে কোথাও পানির প্রবাহ নেই। বরং পানিপ্রবাহের বদলে সেখানে জমে আছে ময়লার বিশাল স্তূপ।

কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত আদি বুড়িগঙ্গা। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেলের দুই পাশে রয়েছে কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা। দখল করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দীর্ঘ সময় ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ না থাকায় আদি বুড়িগঙ্গার ওপর গড়ে উঠেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন।

বেড়িবাঁধ ইসলামবাগ থেকে কোম্পানিঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পাড় ঘেঁষে দেখা গেছে বিপুল অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছে পাকা, আধাপাকা ও টিনের ঘর, রিকশার গ্যারেজ, ট্রাকস্ট্যান্ড, ট্রেম্পুস্ট্যান্ড, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কারখানা। রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও।

দখল-দূষণের পেছনে কারা?

স্থানীয় সূত্র জানায়, বেড়িবাঁধের সড়ক ও কামরাঙ্গীরচরের দুই পাশ থেকে ময়লা ফেলে আদি বুড়িগঙ্গা ভরাট করা হয়। ময়লা ফেলে ভরাটের পর সে অংশে গড়ে তোলা হয় রিকশার গ্যারেজ বা কাঁচা স্থাপনা। রনি মার্কেট অংশে খালের ওপর গড়ে উঠেছে মার্কেটের বর্ধিতাংশ, পাকা স্থাপনা। দিনের পর দিন ময়লা ফেলে বেড়িবাঁধ অংশের সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে বিশালাকার টেম্পুস্ট্যান্ড। কিছুটা পশ্চিম দিকে আদি বুড়িগঙ্গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাকস্ট্যান্ড, দোকান ও বসতবাড়ি।

কোম্পানিঘাট এলাকায় খালের ওপর কায়দা করে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে মেটাডোর কোম্পানি। মসজিদ বরাবর আদি বুড়িগঙ্গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কোম্পানিটির কারখানা। মেটাডোরের পাশে থাকা পান্না ব্যাটারিও দখল করে আছে আদি বুড়িগঙ্গা। কোম্পানি দুটির বিপরীত পাশে রয়েছে স্থানীয়দের আরও অনেক অবৈধ স্থাপনা।

কামরাঙ্গীর চরের পরে হাজারীবাগ, ঝাউচর, বউবাজার ও রায়েরবাজার অংশে আদি বুড়িগঙ্গার দেখা মেলে নামমাত্র। দুই পাড়ের বসতবাড়ি, বাজার ও কারখানা থেকে সব বর্জ্য ফেলে হচ্ছে পানিতে। ফলে পানির প্রবাহের জায়গা ময়লার বিশাল স্তূপ গড়ে উঠেছে। ভাসমান এ ময়লার স্তূপ এতটাই পুরু হয়েছে যে, এর ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারে। নিচে পানির প্রবাহ রয়েছে তা নিশ্চিত হতে অন্তত এক ফুট পরিমাণ ময়লা সরাতে হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/কারই/মোআ)