‘উত্তর জামসা আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ বাসিন্দাদের মানবেতর জীবন

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৫১

আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের ১৮ বছরেও সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ‘উত্তর জামসা আশ্রয়ণ প্রকল্প’। এতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন আশ্রয়ণের ৬০টি পরিবারের বাসিন্দা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার জানালেও মেলেনি কোন প্রতিকার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়ের মোট ছয়টি প্লটে ১০টি করে ঘর রয়েছে। এই ৬০টি ঘরে প্রায় ২৫০ জন মানুষ বসবাস করে। ঘরগুলো একেবারেই বসবাসের অনুপযোগী। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরগুলোতে চুইয়ে পানি পড়ে। ঘরের বেড়া, দরজা-জানালাও ভেঙে গেছে। ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে কোন রকম বসবাস করে আসছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। গোসলখানা, টয়লেট ও টিউবওয়েলগুলোরও বেহাল দশা। প্রায় তিন বছর আগে আগুন লেগে পুড়ে যায় ১০টি ঘর। অন্যত্র সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করছেন ওই ১০ পরিবারের বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা বলছে, ২০০৩ সালে তৎকালীন সরকার সিংগাইরের উত্তর জামসা গ্রামে দুস্থ ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করেছিল। প্রকল্পের ৬০টি ঘরে ভূমিহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় পরিবার পেয়েছিল স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ।

আশ্রয়নের বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, তিন বছর আগে আগুন লেগে ১০টি ঘর পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়ার পর অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলেও আমাদের কোন প্রকার সহযোগিতা করা হয়নি। সংস্কার করা ঘরের মানুষগুলো আশপাশের ঘরগুলোতে কষ্টে বসবাস করছে। আবাসনের টয়লেট, গোছলখানারও খুব খারাপ অবস্থা। চাল ও বেড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চট ও বস্তা দিয়ে সেগুলো আমরা ব্যবহার করছি। এর আগে অনেকেই এসেছে, ঠিক করে দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।

রিজিয়া নামে এক নারী জানান, ঘরগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার কারণে আমরা অনেক কষ্ট করে এখানে বসবাস করছি। টিনের চাল, দরজা, জানালাগুলোও ভেঙে গেছে। ভাঙাচোড়া এই ঘরে ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট হয়। বৃষ্টি ঠেকাতে আমরা পলিথিন টানিয়ে ঘরে বসবাস করছি। কিন্তু এতেই আমরা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। বাইরে বৃষ্টি পড়ার আগেই যেন আমাদের ঘরে বৃষ্টি পরে এমন অবস্থায় আমরা চলছি।

আশ্রয়ণে থাকা এক বৃদ্ধ জানান, আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলেই আমরা আবাসনে থাকি। এখানকার সবাই অসহায়, দুস্থ। আমাদের যদি নিজেদের টাকা পয়সা থাকতো তাহলে ঘরগুলো নিজেদের টাকা দিয়েই ঠিক করতাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন তিনি যেন আমাদের আশ্রয়ন প্রকল্পটিকে সংস্কার করে দেন।  

জামসা ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মহোদয়কে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত এবিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে এখানকার বাসিন্দার অত্যন্ত মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি এটিকে দ্রুত সংস্কার করে বাসিন্দারের বসবাসের উপযোগী করে দেওয়ার।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লা জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটিকে সংস্কার করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/এলএ)