গৃহবধূ থেকে উদ্যোক্তা

কৃষ্ণ কর্মকার, বাউফল(পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:৫২

জিনিয়া সিদ্দিকী ঘরের বৌ থেকে এখন একজন উদোক্তা। তিনি নিজ চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন বেকারি ব্যবসা। তার ব্যবসার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে নিজ উপজেলাসহ পাশের উপজেলার সর্বত্র। সংসারের কাজের ফাঁকে নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ‘জিনিয়াস কেক ঘর’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান দিয়েই তিনি নিজেকে করে তুলেছেন একজন স্বাবলম্বী নারী হিসেবে।

জিনিয়া সিদ্দিকীর স্বামী নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী মাসুম একটি জাতীয় দৈনিকের বাউফল প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি তিনি একজন পরিবেশক ব্যবসায়ী। তাদের পরিবারে এক ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে।

জিনিয়া সিদ্দিকী বলেন, দুই বছর আগে শখ করে ঘরের একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে একটি কেক তৈরি করি। তখন ওই অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবরা আমন্ত্রিত হয়। অতিথিরা আমার কেকের অনেক প্রশাংসা করেন। তারা আমাকে কেক তৈরি করতে উৎসাহ দেন। এক পর্যায়ে স্বামী মাসুমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনিও আমাকে কেক তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম কিনে দেন। সেই থেকেই শুরু হয় পথচলা।

জিনিয়া বলেন, কেক সাধারণত শিশু-কিশোররা মজা করে খেতে পছন্দ করে সেই দিকটা বিবেচনা করে তিনি কেক তৈরি করেন। কেকের মূল উপাদান ক্রিম, রঙ ও চকলেট যাতে শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য কোন প্রকার ঝুকিপূর্ণ না হয়, তার জন্য মালোয়েশিয়ান ও ইন্ডিয়ান দামি ব্রান্ডের উপাদান ব্যবহার করে থাকি।

আমার প্রতিষ্ঠান ‘জিনিয়াস কেক ঘরের’ কোন শো-রুম না থাকলেও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কালাইয়া-বাউফল ফুড্স ও জিনিয়াস কেক ঘর নামে দুইটি গ্রুপ এবং জিনিয়াস কেক ঘর নামে একটি পেইজ। গ্রুপ ও পেইজে নিয়মিত বিভিন্ন প্রকারের কেকের ছবি পোস্ট হয়। ছবি দেখে অধিকাংশ কাস্টমার অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার দিয়ে থাকেন।

কেক বিক্রি করে তিনি স্বামীর আয়ের পাশাপশি নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। সংসারের যাবতীয় কাজের ফাঁকে নিজ হাতে কেক তৈরি করে বছরে কমপক্ষে এক লাখ টাকা আয় করে থাকেন। তবে করোনা মহামারির এই দুর্যোগটি কাটিয়ে উঠলে এ ব্যবসা দ্বিগুণ হবে বলে জিনিয়া সিদ্দিকী মনে করেন।

বাউফল পৌর শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শারমিন সুলতানা শামিমা বলেন, যে কোন সামাজিক কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য এক সময় জেলা শহর থেকে হরেক ডিজাইনের কেক কিনে নিয়ে আসতাম। দের বছর ধরে জিনিয়াস কেক ঘরের তিনি একজন নিয়মিত কাস্টমার। এই প্রতিষ্ঠানের কেক তুলনামূলক দাম অনেক কম এবং স্বাদে অতুলনীয় ও শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য কোন ক্ষতিকর না।

উপজেলার কালাইয়া বন্দরের বিষ্ণুপ্রিয়া কর্মকার পূজা নামে এক গৃহবধূ বলেন, তাদের যৌথ পরিবারের মাসে দুই একটা পারিবারিক অনুষ্ঠান হয়েই থাকে। এক বছর ধরে জিনিয়াস কেক ঘর থেকেই কেক কিনে থাকি। এই প্রতিষ্ঠানটি অর্ডারের নির্দিষ্ট সময়ে কেক ডেলিভারি দিয়ে থাকে। মফস্বলের একজন গৃহবধূ কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়া এত সুন্দর ডিজাইনের কেক তৈরি করতে পারে, যা দেখলে সত্যিই আশ্চর্য হতে হয়।

বাউফল উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কার্নিজ মাজিয়া বলেন, গৃহবধূ জিনিয়া সিদ্দিকীকে আমি বলব একজন উদ্যোক্তার প্রথম ধাপ। গ্রামীণ নারীদের মধ্যে এ ধরনের উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়া এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর। এ ধরনের উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত।

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :