ধামাকায় সেলারদের পাওনা ২০০ কোটি টাকা, পরিশোধে আল্টিমেটাম

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যান গ্রেপ্তারের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক প্রতিষ্ঠান ধামাকার বিরুদ্ধের প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন সেলাররা।

ধামাকা শপিং ডটকমে (ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড) ২০০ কোটি টাকা বকেয়া আছে বলে জানিয়েছেন সেলার ও গ্রাহকরা। এ টাকা পরিশোধে ধামাকাকে পাঁচ কার্যদিবস সময় দিয়েছেন তারা। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ধামাকার ৬৫০ জন সেলার ও তিন লাখ গ্রাহকের পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ধামাকা শপিং ডটকম সেলার অ্যাসোসিয়েশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ধামাকা শপিং ডটকম সেলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ধামাকায় গ্রাহকদের এক লাখ পণ্য ডেলিভারি বাকি রয়েছে। যা টাকার অংকে ১০০ কোটি টাকা। এছাড়াও, গ্রাহকদের পণ্য দিয়ে বিল সাবমিট করার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাওনা অর্থ পরিশোধের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয় ধামাকা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই ১০ কার্যদিবস এখন ১৬০+ দিবসে অতিবাহিত হয়েছে। এপ্রিল থেকে ধামাকার নির্দেশিত গ্রাহকদের নিকট পণ্য সরবরাহ বাবদ সেলারদের পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি।

বক্তব্যে ধামাকার চেয়ারম্যান ডা. এম আলী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম ডি জসিম উদ্দিন চিশতীর কাছ থেকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সেলারদের পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ভুক্তভোগীরা।

অ্যাসোসিয়েশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিক সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যানের পরিচালনায় সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেলারদের পাওনা অর্থ ফেরত ও গ্রাহকের পণ্য সরবরাহের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

একই সঙ্গে সেলার ও তিন লাখ গ্রাহকের মানবিক দিক বিবেচনা করে ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়াসহ ধামাকা শপিং ডটকম সম্পর্কে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ অনুরোধ করা হয়।

অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্সের নামে বিভিন্ন পণ্যের লোভনীয় অফার ও ভার্চুয়াল সিগনেচার কার্ড বিক্রি করে ১১৭ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুন থেকে অনুসন্ধানে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাহিনীটি । 

এজন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিম উদ্দিন চিশতি, তার স্ত্রী, তিন সন্তান ও ধামাকা শপিংয়ের এক পরিচালক এবং চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গত ৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেছে সিআইডি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলোর জমা ও উত্তোলন স্লিপ এবং দেশের বাইরে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে পাচার করা অর্থ এবং সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

ধামাকা শপিং প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন লোভনীয় অফারে পণ্য দেওয়ার নামে ৮০৩ দশমিক ৫১ কোটি টাকা নেয়। শুরুতে কিছু গ্রাহককে পণ্য দিলেও পরবর্তীতে আর কাউকেই পণ্য না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে এ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও ৬৫০টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পণ্য নিলেও এখন পর্যন্ত তাদেরকে কোনো টাকা পরিশোধ করেনি ধামাকা শপিং।

দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ধামাকা শপিংয়ের এমডি জসিম উদ্দিন চিশতি, তার স্ত্রী ও সন্তান গত জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে দেশে আছেন কেবল পরিচালক (অপারেশন) সাফওয়ান আহমেদ। এই পাচারের একটি অংশ চিশতি পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেছে বলেও উঠে এসেছে সিআইডির তদন্তে।

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/বিইউ/ইএস)