মনমূলুকের নবাব

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:০৬

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

সেদিন দেখি,একটা কুকুর,
পেছনের দু’পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে
সামনের পা দু’টো
হাতের মতো নাড়িয়ে নাড়িয়ে
হেলেদুলে সটান হয়ে মানুষের মতো জমিদারী স্টাইলে হাঁটছে।
আমি বললাম, হায় খোদা,
কলি কালে আরো কতো কি যে দেখবার বাকি আছে,
কে জানে!
কুকুরটা বিরক্ত হয়ে বললো,
আরে ব্যাটা রাখ!
সে ভাবনা চুলোয় যাক;
বলতে পারিস আমার আর তোর মধ্যে  
স্বভাবের কী আছে ফারাক?
জবাব যদি না জানিস, যা;
নিজের চরকায় তেল মাখ!

আমি কাঁচুমাচু করে বললাম, হে সারমেয় সাব!
আপনি যান, এসব বাতচিত আজ না হয় থাক।
ঘেউ ঘেউ করে আচমকা ধমক দিয়ে বলললেন,
সারাটা জনম কুত্তা-কুত্তি বলেই দিলি ডাক,
আজ ক্যান্ এমন ‘সারমেয়’ মোলায়েম বাক।

আমি বিনম্র স্বরে বললাম,
বেমক্কায় পড়লে আমরা সাধু ভাষায় বিড়ালকেও মার্জার কিংবা বাঘের মাসি বলি। ইঁদুরকে মুষিক, বটবৃক্ষকে মহীরূহ, ঝাঁটাকে শতমুখী, শেয়ালকে বুদ্ধিররাজা,ন্যাংটাকে দিগম্বর আর চোরকে স্যার বলে থাকি।
মুখ ভ্যাঁংচিয়ে টিটকারির সুরে সারমেয় মশাই আরো বললেন, এখন ক্যান লেজ গুঁটিয়ে পালাস্ ?
থাকবে ক্যান্ ! আজই সব কথার রফাদফা হয়ে যাক।
আমি বললাম, না , তেমন কিছু না,
আজ খানিকটা তাড়া ছিলো!
এবার উনি আরো বেশি রেগে গেলেন;
তোমাদের নিজেরও তাড়া আছে নাকি?
তোমাদের আবার কিসের তাড়া!
সারাটা জনম শুনলাম, মানুষদেরকে তাড়া করি কেবল আমরা কুকুরেরা।
আমি বললাম, আসলে ব্যাপারটা হলো কি সারমেয় সাব!
মানুষ বাইরে বাইরে শার্দুল, ভেতরে কুকুরের স্বভাব।
সারমেয় সাহেব বললেন,বাইরে কুকুরেরা জন্তু
ভেতরে বিশ্বাস ভক্তি সহমর্মের মনমূলুকের নবাব।
আমি কোনো রকমে রক্ষা পেয়ে আমার পথে হাটলাম;
আর ভাবলাম,
আচ্ছা, আমি কি কুকুরের মতো মানুষ হতে পারবো?
নাকি কুকুরের স্বভাবেরও অধম হয়ে  
‘মানুষ’ নামের নকশা নিয়ে বাঁচবো?