কলাপাড়া মসজিদের টাকা আত্মসাৎ: আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:২৫

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের চার কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম রাকিবুল আহসানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছে পটুয়াখালী জেলা ওয়াকফ পরিদর্শকের কার্যালয়।

অভিযুক্তদের দেয়া জেলা ওয়াকফ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক শাহিন স্বাক্ষরিত নোটিশে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জমি বিক্রির চার কোটি টাকা এবং মসজিদের ফান্ড থেকে উঠিয়ে ৮৪ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগসহ ‘আল্লাহর পবিত্র ঘর রক্ষার জন্য’ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন মসজিদের মুসল্লি মো. নজরুল তালুকদার বাদশা ও আ. হান্নান।

এছাড়া মসজিদের অর্থ ও সম্পদ আত্মসাৎ, অবৈধভাবে জমি বিক্রি ও দখলে নেয়াসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া এবং মসজিদের নতুন কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য আ. হান্নান, যা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।  

ঐতিহ্যবাহী খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদটি নির্মিত হয় ১৯২১ সালে। নির্মাণের পর থেকে সুনামের সঙ্গে মসজিদটি পরিচালিত হয়ে আসছে। মসজিদের নামে খেপুপাড়া মৌজা, ৬ নম্বর জেএল, এসএ খতিয়ান নং ৪০৯, যার দাগ নং ১৭৯, ৬৪০সহ একাধিক দাগে ২১ দশমিক ৯৬ একর জমির ছাপানো রেকর্ড রয়েছে। ২০১১ সালে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ (আ.লীগ সহ-সভাপতি), সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম রাকিবুল আহসান (আ.লীগ সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান), ক্যাশিয়ার মীর আবদুল বারেক (আ.লীগ নেতা) একত্রিত হয়ে মসজিদের জমি থেকে দুই কোটি টাকার জমি সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন।

এরপর ২০১৩ সালে উক্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ২০১৭ সালে অবৈধভাবে উল্লিখিত কমিটির তিনজন তিনটি সাব কবলা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করে অনুমান দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনটি দলিল মূলে অন্যায়ভাবে মসজিদের জমি কেনন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আ.লীগ সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার, মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব বিলকিস জাহান ও তার স্বামী মো. ইউসুফ আলী।

অবৈধভাবে কেনা মসজিদের উক্ত জমির বর্তমান বাজার মূল্য অনুমান ১০ কোটি টাকা। এছাড়া মসজিদ নির্মাণে মুসল্লিদের দেয়া দানের ৮৪ লাখ টাকা মসজিদ ফান্ড থেকে তুলে আত্মসাৎ করেন কমিটির তিনজন। এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক শাহিন অভিযুক্ত ছয়জনকে নোটিশ দেন।

এদিকে মসজিদের একাধিক মুসুল্লি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন মসজিদ ভবন নির্মাণ কাজ, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিন কোয়ার্টার ও অজুখানা নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ও স্থানীয় মুসল্লিদের অনুদান পাওয়ার পরও মসজিদ কমিটির উল্লেখিত তিনজন মসজিদ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে নির্মাণ খরচ করেন।

পুরাতন ভবন ও অন্যান্য ঘর বেশি টাকা নিলামে বিক্রি করে মসজিদ ক্যাশে কম টাকা জমা দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। ভবন নির্মাণে মুসল্লিদের দান-অনুদানের সঠিক তথ্য লেখা হয়নি। মসজিদ পুকুরের মাছ বিক্রি করে মসজিদ তহবিলে তারা জমা দেননি। এমনকি উল্লিখিত মসজিদ কমিটির তিনজন দায়িত্বে থাকাকালে মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও বর্তমান কমিটিকে দেননি।  

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সাবেক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিন কোয়ার্টার নির্মাণ করেছি ৮-১০ বছর আগে। ১১ কানি জমি কিনেছি। একটা জমি নিয়ে একটু সমস্যা আছে, যা বর্তমান কমিটি চেষ্টা করলে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে সমাধান করতে পারবে।

খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক অভিযোগের তদন্ত করছেন।

জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক শাহিন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/কেএম)