দালাল প্লাসের গ্রাহকদের দীর্ঘ অপেক্ষা, আছে শঙ্কাও

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:০০ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৩৭

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দালাল প্লাসে গত ১৪ জুন একটি মোবাইল ফোনের জন্য টাকা জমা দেন মো. আদনান নামে এক তরুণ। ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খবর নেই অর্ডারকৃত পণ্যের। এখন মোবাইল পাওয়ার আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছেন তিনি। বরং জমা দেওয়া টাকা ফেরত পাবেন কি না সেটা নিয়ে আছেন শঙ্কায়। সম্প্রতি ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিণতি দেখে তার সেই শঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে।  

রবিবার ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে আদনান বলেন, ‘৩০ কর্মদিবসে আমার মোবাইল পাওয়ার কথা। তিন মাস শেষ, এখনো কোনো খবর নাই। এখন টাকা ফেরত পাবো কি না সেটা নিয়েই আশঙ্কায় আছি।’

এ বিষয়ে দালাল প্লাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে ভুক্তভোগী বলেন, ‘যোগাযোগ তো নিয়মিত করা হয়। কিন্তু তাদের একটাই কথা, অপেক্ষা করেন। অপেক্ষা করতে করতে তো তিন মাস শেষ। আর কত?’

আদনানের একদিন পর পণ্য অর্ডার করেন সাইফুল ইসলাম নামের একজন। তিনিও এখনো ডেলিভারি পাননি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রবিবার দুপুরে দালাল প্লাসের ফেসবুক পেইজে কমেন্ট করেন তিনি।

কমেন্টে সাইফুল লিখেন, ‘১৫ জুন অর্ডারের খবর নাই, আপনারা ডি ১০ নিয়ে আছেন। আমরা যারা জুনে অর্ডার দিয়েছি, ওগুলো কি টাকা না? অর্ডার নাম্বার ৫২৩১৮।’

সাইফুলের এমন কমেন্টের বিপরীতে দালাল প্লাস উত্তর দেয় ওই পোস্টে। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘আমরা একসাথে ১লা জুন থেকে ৭ই জুনের পূর্ববর্তী ক্যাম্পেইনের ডেলিভারি এবং ১লা জুলাই থেকে ৭ই জুলাই ডি৭ ক্যাটাগরিতে যারা অর্ডার করেছিলেন সেগুলোর এবং ৮ই জুন থেকে ১৬ই জুন এর ডেলিভারি একযোগে চলছে। যারা ডেলিভারি পাবেন তাদেরকে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

সাইফুল ইসলামসহ যেসব গ্রাহক তাদের পণ্যের ডেলিভারির বিষয়ে দালাল প্লাসের ফেসবুক পেইজে জানতে চেয়েছেন তাদের ‘কঠোর’ বার্তা দিচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি। উত্তরে দালাল বলেছে- ‘আমরা অত্যন্ত কঠোরভাবে বলতে চাই, ডেলিভারি এসএমএস যারা পাবেন শুধুমাত্র তারাই এসে ডেলিভারি নিবেন, কিন্তু যাদের ডেলিভারি এসএমএস যাবে না তাদেরকে সময় দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি।’

এসব বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম রাব্বি আল আমিনের নম্বরে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে প্রতিষ্ঠানটির হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে কাস্টকেয়ার প্রতিনিধি সুমন কল ধরেন। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি জানান, দালাল প্লাসের জনসংযোগ বিভাগ নেই।

আদনানের পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে এই কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘৮ জুন থেকে ১৬ জুনের মধ্যে যে অর্ডার হয়েছে, তা এখন ডেলিভারি চলছে। তিনিও দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি পাবেন।’

গ্রাহকের উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘যাদের ডেলিভারি দেওয়া হবে, তাদেরকে আগে থেকে ম্যাসেজ দেওয়া হয়। অন্যরা এলে ডেলিভারিতে সমস্যা হয়। এজন্য এই বার্তা দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু মোটরসাইকেল গ্রাহকদের জন্য।’

৩০ কার্যদিবসে ডেলিভারি দেওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারি না পেলে বা ডেলিভারির ম্যাসেজ না পেলে গ্রাহক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে পারে। এক্ষেত্রে অফিসে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এখন কর্তৃপক্ষ যদি কঠোরতা দেখায়, সেটি কি যৌক্তিক কি না এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি ওই কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি।

দালাল প্লাসের শর্ত ও এই কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির ভাষ্যমতে, আদনানের পণ্যের ডেলিভারি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে তিন মাস সময় পার হয়ে গেছে। কবে নাগাদ ওই গ্রাহক তার পণ্য বুঝে পাবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টকেয়ার প্রতিনিধি সুমন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ রকম কোনো আপডেট নেই।’

গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে দীর্ঘ সময় পরে পণ্য সরবরাহ করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দালাল প্লাস। ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ পালিয়ে গেলে বা ইভ্যালির মতো বন্ধ হয়ে গেলে টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের করণীয় কি? একই সঙ্গে গ্রাহকের থেকে টাকা নেওয়ার বিপরীতে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহক টাকা ফেরত পাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি বলেন, ‘টাকা তো আমরা নিচ্ছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা হচ্ছে গেটওয়েতে। পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার পর গেটওয়ে থেকে আমরা টাকা নিতে পারছি। তার আগে টাকা গেটওয়েতে থাকছে।’

যদিও গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক দালাল প্লাস। এক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া গেটওয়ে কাউকে টাকা পরিশোধ করবে না। যা এরইমধ্যে ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের সঙ্গে ঘটেছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের করণীয় কী? জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘টাকা জমা নেওয়ার বিপরীতে অর্ডারের ও টাকা জমা দেওয়ার কপি গ্রাহকের কাছে থাকে। এর বাইরে আর কোনো নিশ্চয়তা প্রদান করার সুযোগ তাদের কাছে নেই।’

সম্প্রতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার হলে প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা দেনা। সেই টাকা পরিশোধের মতো টাকা প্রতিষ্ঠানটির কাছে নেই।

একই অবস্থা গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা লোপাট করা আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের। গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন করলেও তাদের অ্যাকাউন্টে জমা অর্থের পরিমাণ খুবই সামান্য। যে টাকা কোনো গ্রাহকই এখনো ফেরত পাচ্ছেন না। বড় দুটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের করুণ পরিণতি দেখে দালাল প্লাসসহ অন্যান্য ই-কমার্স গ্রাহকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও উদ্বেগ।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/কারই/জেবি)