নগদ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ভাতার টাকা আত্মসাৎ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৪৩
এই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে

ঝিনাইদহে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কে বা করা হতদরিদ্রদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে টাকার শোকে হতদরিদ্ররা আহাজারি করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।

কিন্তু এ ব্যাপারে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের গড়িমসির কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলে শত শত বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে হা-হুতাশ বাড়ছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ এপ্রিল মাসে ঝিনাইদহে প্রাইমারি স্কুলের প্রায় শাতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়। সেই টাকা আজো উদ্ধার হয়নি। শনাক্ত করা যায়নি প্রতারক চক্রকে। এরই মধ্যে এই প্রতারকচক্রের আবার নজর পড়েছে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রদেয় অন্যান্য শিক্ষা উপবৃত্তি, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার উপর।

শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের হাসি রানীর অভিযোগ, তিনি নতুন ভাতাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু প্রথম কিস্তির টাকা তিনি পাননি। নগদ অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন তার টাকা কে বা কারা হ্যাক করে তুলে নিয়েছে।

তার মতো অনেকের টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের সদস্য অনিতা বিশ্বাস।

ঝিনাইদহ পৌর এলাকার কালিকাপুর গ্রামের ফারজানা আফরিন অ্যানী জানান, অহসায় প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনি প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে আসছেন। তিনি নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার পর সাড়ে চার হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা আসে। কিন্তু সেই টাকা গত ৯ জুলাই কে বা কারা ট্রান্সফার করে নেয়। এ ঘটনায় তিনি ১৯ আগস্ট ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি জিডি করেছেন। কিন্তু এখনো টাকা ফিরে পাননি।

ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় এভাবে শত শত নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর হ্যাক করে উপবৃত্তি, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সারা জেলা থেকে এ রকম শত শত অভিযোগ পাচ্ছি, কিন্তু তাদের কোনো সহায়তা দিতে পারছি না।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল সামি জানান, সারা জেলা থেকে কত জনের নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লার ১৩৬ জন বয়স্ক, চারজন বিধবা, ২৩ জন প্রতিবন্ধী ও চারজনের শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা তাদের নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই টাকার পরিমাণ প্রায় ৪৭ লাখ বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার পর নগদ কর্মীদের দেওয়া গোপন পিন নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারেনি ভাতাভোগীরা। সমাজসেবা থেকে এমন অভিযোগ অধিদপ্তরে দিলে সব গোপন পিন ‘অটো রিসেট’ করে দেওয়া হয়। পরে ভাতাভোগীরা গোপন পিন রিসেট করে দেখেন তাদের অ্যাকাউন্টের টাকা আগেই তুলে নেওয়া হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ঝিনাইদহ থেকে ঠিক কত জনের টাকা নগদ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তুলে নেওয়া হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে আমরা প্রাথমিক ভাবে এক হাজার ভাতাভোগীকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের তালিকা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে দিয়েছি। সেখান থেকে নগদ কর্তৃপক্ষের কাছে গেছে। তবে, টাকা উদ্ধারের কোনো সুখবর তার কাছে নেই বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :