আর কতদিন আড়ালে থাকবেন পপি?

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৪২

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

এক বছরের বেশি সময় ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। অভিনয়সহ সবকিছু থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন। তাকে না পাওয়া যাচ্ছে ফোনে, না সামাজিক মাধ্যমে। চলচ্চিত্রপাড়ায় পপির ঘনিষ্ঠরাও তার খবর জানেন না। ঢালিউডের জনপ্রিয় দম্পতি ওমর সানী-মৌসুমী সম্পর্কে পপির বোন-দুলাভাই। তারাও জানেন না অভিনেত্রী কোথায় আছেন, কেমন আছেন।

কয়েক মাস আগে পরিচালক ও অভিনেতা রাজু আলিম অনেকটা হারিকেন জ্বালিয়ে খুঁজছিলেন পপিকে। কারণ তার ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ নামে একটি ছবির কিছু অংশের কাজ বাকি রেখেই লাপাত্তা হয়ে গেছেন নায়িকা। অনেক খুঁজে, নানাভাবে যোগাযোগ করেও পপির দেখা পাননি রাজু আলিম।

এই পরিচালকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেই এসব কথা ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছিলেন। এও জানিয়েছিলেন, ঢাকার কোনো এক শিল্পপতিকে গোপনে বিয়ে করে সংসার করছেন পপি। থাকছেন ওই শিল্পপতির দেওয়া ফ্ল্যাটে। কিন্তু ওই শিল্পপতির নাম কী বা নায়িকা ঢাকার কোথায় থাকেন, সে সম্পর্কে রাজু আলিম কিছু জানাতে পারেননি।

এদিকে, রাজু আলিমের পর এবার পপির খোঁজে নেমেছেন ওমর মালিক নামে এক প্রযোজক। তিনি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর ‘ধোঁয়া’ নামে একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন পপি। এক লাখ টাকা সাইনিং মানিও নিয়েছিলেন। সে সময় এই প্রযোজককে পপি অনুরোধ করেছিলেন, ছবির কাজ শুরু হওয়ার আগে কোনো কিছু প্রকাশ না করতে।

প্রযোজক ওমর মালিক জানান, চলতি বছরের মার্চে তার ‘ধোঁয়া’ ছবিটির কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই পপি লাপাত্তা। তিনি ছবিটি করবেন কি না জানাননি। যদি না করেন তবে তো সাইনিং মানি ফেরত দেওয়ার কথা। সেটাও দেননি। মোটকথা, ‘ধোঁয়া’ ছবিটি নিয়ে পপির সিদ্ধান্ত কী, তা কোনোভাবেই জানতে পারছেন না প্রযোজক ওমর মালিক।

অনেক চেষ্টার পর একটি সূত্র মারফত প্রযোজক জানতে পারেন, পপি খুলনায় তাদের গ্রামের বাড়িতে থাকেন। সেই সূত্র ধরে ওমর মালিক নায়িকার বাবা আমির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু আশাহত হন। কারণ পপির বাবা জানান, তার মেয়ে খুলনায় থাকেন না। ঢাকাতেই থাকেন। তবে কোথায় কার সঙ্গে থাকেন তা জানেন না।

তাহলে উপায়? কী করবেন প্রযোজক ওমর মালিক? কী হবে পপিকে দেওয়া তার এক লাখ টাকা সাইনিং মানির? এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেবেন তিনি? এসব প্রশ্নের জবাবে প্রযোজক ওমর মালিক বলেন, ‘আমরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব। তার মধ্যে যদি পপির খোঁজখবর না মেলে, তবে আমরা বিষয়টি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত জানাব।’

তবে শুধু পরিচালক-প্রযোজকরা নন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা পপির অপেক্ষায় আছেন তার অগণিত ভক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অভিনেত্রীকে নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ হলে সেখানে একটা প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি উঠে আসে, আর কতদিন আড়ালে থাকবেন পপি? তিনি কি প্রকাশ্যে আসবেন না? যদিও এই প্রশ্নের উত্তর কেবল পপিই জানেন।

ক্যারিয়ারে প্রেম ও বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে একাধিক বার আলোচনায় এসেছেন এই নায়িকা। একসময় পপির সঙ্গে নায়ক শাকিল খানের জুটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। একসঙ্গে হাফ ডজন ছবিতে অভিনয় করেছেন তারা। যার প্রতিটিই ছিল সুপারহিট। পর্দার পাশাপাশি শাকিল-পপির বাস্তবের রসায়নও বেশ চর্চায় ছিল সে সময়। তাদের প্রেমের কথা জানতো এফডিসির ইট-পাথরও।

শোনা যায়, শাকিল-পপির নাকি গোপনে বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু বিয়ে তো দূরে থাক, একাধিক সাক্ষাৎকারে নিজেদের সম্পর্কের বিষয়টাই বেমালুম অস্বীকার করেন এই দুই তারকা। এসব সাক্ষাৎকার যখন দেন, তখন তাদের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক। একে অন্যের চোখের বালি। যার কারণে ২০০০ সালের পর থেকে শাকিল-পপিকে একসঙ্গে আর কোনো ছবিতে দেখা যায়নি।

শাকিল অধ্যায় শেষ হওয়ার অনেক বছর পর পপির জীবনে আসেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। এ জুটির সম্পর্কও বছর দুয়েক আগে বেশ চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। গুঞ্জন ওঠে, তারা বিয়ে করে রাজধানীর ইস্কাটনে বাসা ভাড়া করে থাকেন। গত বছরের শুরুতে তাদের বিয়ের কাবিননামার একটি ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, যা তাদের বিয়ের গুঞ্জনকে আরও জোরালো করে।

এছাড়া ইস্কাটনের বাসায় জায়েদ-পপির বিয়ের প্রথম বার্ষিকী পালনের ছবিও ফাঁস হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এবারও নায়িকা এ গুঞ্জনকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন। গত বছর লাপাত্তা হওয়ার আগে দেওয়া একটি টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিয়ে করলে লুকিয়ে করব না, সবাইকে জানিয়ে করব। আপাতত বিয়ের কোনো চিন্তা নেই। যখন করব, তখন সবাই জানতে পারবেন।’

জায়েদ খানও পপির সঙ্গে তার সম্পর্ক ও বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। এর কয়েক মাস পরই লাপাত্তা হয়ে যান পপি। এবার তার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় এক শিল্পপতির। যাকে তিনি বিয়ে করেছেন বলে গুঞ্জন। কিন্তু এটাও কি শুধুই গুঞ্জন নাকি বাস্তব, তার উত্তর কে দেবে? পপি তো হাওয়া! তার আড়াল ভাঙার অপেক্ষায় সকলে।

১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘কুলি’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় দীর্ঘাদেহি নায়িকা পপির। প্রথম ছবিতে তার নায়ক ছিলেন ওমর সানী। অ্যাকশন-কমেডি ঘরানার এই ছবি ও পপির অভিনয়- দুই-ই বেশ সাড়া ফেলেছিল। দুই যুগের ক্যারিয়ারে দুই কুড়ি ছবিতে দেখা গেছে এই নায়িকাকে। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন তিন বার।

ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এএইচ