সুচিকিৎসায় ভালো থাকবেন সিএমএল ব্ল্যাড ক্যানসার রোগীরা

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৩৯ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দীর্ঘমেয়াদী রক্তের ক্যানসার ক্রনিক মাইলোয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং যথাযথ তদারকি করা হলে সিএমএলে আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

 

আন্তর্জাতিক সিএমএল দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএসএমএমইউর ডি-ব্লকের সামনে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে র‌্যালি ও দিবসের উদ্বোধন করেন বিএসএমএমইউর শারফুদ্দিন আহমেদ। এর আগে তিনি বিএসএমএমইউর ডি ব্লকের ১৫ তলায় আধুনিক হেমাটোলজি ওয়ার্ডের উদ্বোধন করেন।

 

হেমাটোলজি বিভাগ আয়োজিত এই ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সিএমএল হলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রক্তের ক্যানসার। এই রোগ নিয়ে আতকিংত না হয়ে এর সুচিকিৎসা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এই রোগের সুচিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন-যাপন সম্ভব।

 

বিএসএমএমইউর উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন হয়েছে স্বাস্থ্যখাতও তার মধ্যে অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় বিএসএমএমইউর সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্পতম সময়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।

 

মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ বর্তমানে দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বিশ্বের ১৫১টি দেশে বাংলাদেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে এটা স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের একটি বিরাট অর্জন।

 

বিএসএমএমইউর উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে, জাতিরসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সকলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সর্বজনীন আহবান জানান।

 

তিনি বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

 

অনুষ্ঠানের সভাপতি হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন শাহ বলেন, সাধারণত পঞ্চাশ বা ষাট বছরের পরে বেশি দেখা যায় এই রোগটি, তবে ত্রিশ বা চল্লিশের বছর বয়সেও অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তুলনামূলকভাবে পুরুষরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সিএমএল রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের দুর্বলতা, শেষ রাতে ঘাম হওয়া, ওজন হ্রাস পাওয়াসহ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি অনেকের পেটের বামপাশে চাকা বা ভারী অনুভুতি থাকতে পারে যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে অনেকেই খাবার খেতে না পারা বা অল্প খেলে পেট ভরে যাবার সমস্যায় পড়তে পারেন। অনেকের ক্ষেত্রে রোগ থাকা সত্ত্বেও রোগের কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ পায় না বরং রুটিন চেকআপ বা অন্য রোগের কারণে পরীক্ষা করতে গিয়ে এ রোগ ধরা পড়ে। নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং যথাযথ মনিটরিং করা সম্ভব হলে অধিকাংশ রোগীই প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। তবে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এলোজেনিক হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোনমেরো  ট্রান্সপ্লান্টেশন এর মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব।

 

তিনি আরও বলেন, সিএমএল যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী রোগ, তাই, অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা, দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে, কারো ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যাও থাকতে পারে। সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জাতীয় পর্যায়ে সিএমএল রোগীদের রেজিস্ট্রি তৈরি করার মাধ্যমে তাদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা এবং তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করণে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।

 

বিএসএমএমইউর হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন শাহের  সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আয়োজনে  বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) একেএম মোশাররফ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম বক্তব্য রাখেন।

 

ঢাকাটাইমস/২২ সেপ্টেম্বর/এএ/ইএস