দেশজুড়ে ডাকাতির স্বর্ণ বেচা হয় তাঁতীবাজারে
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি ও চুরির স্বর্ণালংকার পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অবৈধভাবে স্বর্ণ কেনায় জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্রও শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
রাজধানীর ধানমন্ডির রাপা প্লাজা থেকে ২০০ ভরি স্বর্ণ ও সাভারের আশুলিয়ায় ১৯টি স্বর্ণের দোকানের ডাকাতির রহস্য উন্মোচনে গিয়ে এ তথ্য পেয়েছে বাহিনীটি। এই দুই ঘটনায় জড়িত এক নারীসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বর্ণের দোকানে চুরি, বিক্রি এবং পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিআইডি বলছে, আশুলিয়া ও রাপা প্লাজায় ডাকাতিতে জড়িতরা একই চক্রের সদস্য।
বুধবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।
চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টা থেকে পৌনে চারটা পর্যন্ত আশুলিয়া থানার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নয়ারহাট বাজারের ১৯টি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইসব দোকান থেকে অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জন সশস্ত্র ডাকাত স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং নগদ টাকাসহ সর্বমোট এক কোটি দুই লাখ ৩২ হাজার ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওইদিন আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়।
মামলার তদন্তের নেমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ছয় সদস্য- শাহানা আক্তার, আল মিরাজ মিন্টু কামাল খান, আনোয়ার হাওলাদার, মো. দেলোয়ার হোসেন খলিফা, কামাল খা এবং মো. সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ডাকাতি মাল কেনার অপরাধে সবুজ রায় ও আবদুর রহিমকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
সিআইডি জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বাড্ডার গুলশান লিংক রোডের একটি ভাড়া বাসা অভিযান চালায় সিআইডি। অভিযানে শাহানা আক্তার নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে তার কাছ থেকে ডাকাতির লুট করা স্বর্ণ বিক্রির নগদ দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৪০ টাকা তিন থেকে চার ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। শাহানা আক্তারকে পরের দিন আদালতে হাজির করলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন। পরে গ্রেপ্তার করা হয় আল মিরাজ মিন্টু (৩৮) ও কামাল খান (৩৯)। তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আশুলিয়ার নয়ারহাটে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত আনোয়ার হাওলাদার (৩৯), মো. দেলোয়ার হোসেন খলিফা (৩৬), আব্দুর রহিম (৫৫), আল মিরাজ ওরফে মিন্টু (৩৮), কামাল খাঁ (৩৯) ও মো. সাগরকে (৪০) গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
গ্রেপ্তারকৃতরা জানান তাদের দেওয়া স্বর্ণ তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ী সবুজ রায় ও আব্দুর রহিম কেনেন। তাদের দেওয়া তথ্যে ঢাকার নয়াবাজার এলাকার আবদুর রহিমের ভাড়া করা বাসা থেকে আশুলিয়ার ডাকাতির ঘটনার লুণ্ঠিত ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। যার দাম ১৪ লাখ টাকা।
এদিকে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাতের বেলায় ডিএমপির ধানমন্ডি থানার রাপা প্লাজার দ্বিতীয় তলার রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সের তালা ভেঙে ২০০ ভরি স্বর্ণ লুট করে ডাকাতদল। এ ঘটনায় ওইদিন ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়। আশুলিয়ার ডাকাতির ঘটনায় আটক ব্যবসায়ী সবুজ রায় এবং আবদুর রহিম জানিয়েছেন তারা পাঁচ থেকে ছয়জন রাপা প্লাজায় ডাকাতিতে জড়িত।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুরান ঢাকার নয়াবাজারের সবুজ রায়ের ভাড়া করা বাসা থেকে এই ডাকাতির ঘটনার লুন্ঠিত ১২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। যার দাম আট লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, ‘লুট করা স্বর্ণালঙ্কার রাজধানীর তাঁতীবাজারে অবৈধভাবে বেচাকেনার সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে সিআইডি’র কাছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে লুন্ঠিত স্বর্ণের অলঙ্কার গলিয়ে স্বর্ণের পাত বানিয়ে মূলত তাঁতীবাজারে অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, আসামিদের জবানবন্দীতে এসব স্বর্ণ কেনায় জড়িত হিসেবে তাঁতীবাজারের খাঁজা করপোরেশন, রাজিয়া বুলিয়ান স্টোর, সুমন বুলিয়ান স্টোর এর নাম উঠে এসেছে।
এসবে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারিসহ আইনগত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এএ/ইএস