মাঝিকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল, মামলা না নেয়ার অভিযোগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১৯

খেলা মাঝিকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ফেসবুকে’ ভাইরাল হলেও মামলা নেয়নি মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ। দুই দিন আগে মাদারীপুর পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় সাইদুল মাল নামে এক খেয়ামাঝিকে বেদম মারধর করেন উঠতি বয়সী কিছু যুবক। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মাঝি। তবে বুধবার দুপুরেও মামলা নথিভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ফেসবুকে’ ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী কয়েকজন যুবক লাঠি দিয়ে এক ব্যক্তিকে বেদম পিটাচ্ছেন। কিছু লোক তাদের ফিরানোও চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা তাদের কথা না শুনে লোকটাকে মারধর করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে ১০ থেকে ১২ জন যুবক লঞ্চঘাট এলাকার দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদী পার হয়ে পাঁচখোলায় যাচ্ছিলেন। এসময় নদী পারাপারের নৌকার মাঝি সাইদুল মালের খেয়ায় তারা পার হয়। প্রথম পারাপারের সময় তারা ফেরার পথে ভাড়া দেবে বলে চলে যায়। কিছু সময় পরে ফিরে এসে আবার খেয়া নৌকায় পার হওয়ার সময় খেয়ার মাঝি ভাড়া দাবি করলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে খেয়ামাঝি সাইদুল মালকে মারধর করে আহত করে কিশোররা মিলে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানায় কিশোরদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী খেলার মাঝি। তবে অজ্ঞাত কারণে দুই দিন গেলেও মামলাটি আমলে নেয়নি থানা পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাঝি সাইদুল মাল।

এ ব্যাপারে খেয়ামাঝি সাইদুল মাল বলেন, ‘আমি নয়জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় বখাটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করি। যেখানে আসামি করা হয় সদর উপজেলার পূর্ব রাস্তি এলাকার টিপু হাওলাদারের ছেলে সাজিদ হাওলাদার, সিরাজ বেপারীর ছেলে আকাশ বেপারী, সেন্টের ছেলে শামিম, সেলিমের ছেলে রবিন, আইয়ুবের ছেলে সরল, সুমনের ছেলে হাসান, সেলিমের ছেলে জুম্মন। এদের সবার বাড়ি সদর উপজেলার পূর্বরাস্তি এলাকায়। এছাড়া অমিত ও আশিক নামে দুজনসহ অজ্ঞাত আরো চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তবে কেন মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করছেন না, বিষয়টি বুঝছি না। এরা সবাই এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় হয়ত মামলা হচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে খেয়া ঘাটের ইজারাদার আবদুর রশিদ গৌড়া জানান, ‘খেয়া দিয়ে পাঁচখোলা এলাকার চার থেকে পাচ হাজার লোক দৈনিক এপার-ওপার যাতায়াত করে। এলাকার গরিব জনগণের কথা চিন্তা করে আমরা ইজারাদার হিসাবে এ ঘাটের খেয়া নৌকার থেকে কোন টাকা নেই না। যে কারণে এলাকার লোকজন মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকা ভাড়া দিয়ে আড়িয়াল খাঁর মতো বড় একটি নদী পারাপার হতে পারছে। এরপরেও বহিরাগত এসব কিশোর-যুবক মাঝেমাঝেই ঘাটে এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

লঞ্চঘাট ঘুরে স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকানদারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আশেপাশের কিছু বখাটে যুবক নিয়মিত লঞ্চঘাট এলাকায় এসে বাজে আড্ডায় লিপ্ত হয়। তারা ঢাকা থেকে আসা ঘাটে অবস্থান করা লঞ্চে উঠে আড্ডা দেয় এবং নেশা করে। লঞ্চ স্টাফরা কিছু বলতে সাহস পায় না। আর কিছু বললে তাদের গালাগালি করে। এই লঞ্চ ঘাটের ২০০ গজের মধ্যে ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ি।

এলাকার লোকজনের দাবি, প্রতিদিন অথবা দুই একদিনের ফাঁকে সকাল ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত যদি দুজন পুলিশ ফাঁড়ি থেকে এসে ঘাটে টহল দেয়। তাহলে এসব সন্ত্রাসী আর ঘাট এলাকায় এসে অপকর্ম করতে সাহস পাবে না।

এদিকে ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে ওসব যুবকরা। তাদের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।

লঞ্চঘাট সংলগ্ন ১নং পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মনির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পরপর সদর থানা থেকে অফিসার ও ফোর্স এসেছিল। এ ব্যাপারে খেয়ামাঝি থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আশা রাখি, মামলা রেকর্ড হলে আসামিরা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে।’

এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার থানায় ছিলাম না। সাইদুল মাল নামে কেউ অভিযোগ দিয়েছে কিনা, সেটা আমার জানা নেই। যদি অভিযোগ দিয়ে থাকে, তদন্ত করে মামলা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :