খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে নিম্নমানের চাল: তদন্ত কমিটি

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৫২

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় খাদ্য গুদাম থেকে এক ডিলারের অনুকূলে ১১০ বস্তা নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। পরে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই চাল পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর দুর্যোগকালে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করেন। একজন কার্ডধারী কষ্টে উপার্জনের ৩০০ টাকা দিয়ে ৩০ কেজি চাল সংগ্রহ করেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১২ জন ডিলারের মাধ্যমে পাঁচ হাজার ৩৬৮ জন হতদরিদ্র উপকারভোগী কার্ডধারীকে ১৬১.০৪ মেট্রিক টন চাল প্রতিমাসে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বছরের পাঁচ মাস এ চাল বিতরণ করা হয়।

গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের শৈলমারি বাজারের ডিলার শরিফুল ইসলাম পলাশ উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ১১০ বস্তা (৩ হাজার ৩০০ কেজি) চাল সরবরাহ করেন। রবিবার সেই চাল হতদরিদ্র কার্ডধারীদের মাঝে বিতরণ করতে গেলে নিম্নমানের চাল (দীর্ঘদিনের পুরনো, পচা ও পোকা ধরা নষ্ট চাল) দেখতে পেয়ে ওই ডিলার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসানকে বিষয়টি জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিক চাল বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন।

এরপর সোমবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে নিম্নমানের চাল প্রতীয়মান হওয়ায় অবতরণকৃত ১১০ বস্তা চাল জব্দ করে খাদ্যগুদামে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে ওই দিনই খাদ্যগুদাম থেকে ভালোমানের সমপরিমাণ চাল ডিলারের অনুকূলে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেন তারা।

এদিকে নিম্নমানের চাল বিতরণের ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা রাহাত ইসলামকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কাজী দেলোয়ার হোসেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, উপজেলা বন কর্মকর্তা লিটন মিয়া ও উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহানুর রহমান। তদন্ত কমিটিকে আগামী পরিষদ সভায় প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিলার শরিফুল ইসলাম পলাশ জানান, ‘আমি খাদ্য গুদাম থেকে চাল এনে কার্ডধারীদের মাঝে বিতরণ করতে গেলে খাবারের অনুপযোগী চাল দেখতে পাই। তারপর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানালে তারা সরেজমিনে এসে সেই চাল পরিবর্তন করে ভালো মানের চাল সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেন।’

ডিলারকে নিম্নমানের চাল সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন চাল গুদামজাত থাকায় কিছুটা রঙ পরিবর্তন হয়েছিল। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএন'র নির্দেশে সেই চাল পরিবর্তন করে ভালো মানের চাল দেওয়া হয়েছে।

পরিবর্তনকৃত চাল কি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা চাল সংগ্রহ করি। সেই চাল যেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল সেখানে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে চালগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন, সেই নাম জানতে চাইলে তিনি না বলে এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘নিম্নমানের চাল বিতরণের খবর পেয়ে আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক পর্যায়ে সত্যতা পাওয়ায় সেই চাল পরিবর্তনের নির্দেশ দেই। পরে এ ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিম্নমানের চাল দেখতে পেয়ে ডিলার আমাকে বিষয়টি অবগত করলে তাৎক্ষণিকভাবে চাল বিতরণ বন্ধ করতে বলি। এরপর আমি ও ইউএনও সরজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা দেখতে পাই। পরে সেইসব চাল পরিবর্তন করে ভালো মানের চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এসময় হতদরিদ্রদের চাল বিতরণে কেউ কোন অনিয়ম করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :