টাকাভর্তি মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিলেন ভ্যানচালক বাবুল

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৩৯

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন মোস্তফা খালিদ হায়দার। চলতি পথে অসাবধানতাবশত মানিব্যাগটি হারিয়ে ফেলেন তিনি। মানিব্যাগে তিনটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড, যাতে ছিলো তার বাবার পেনশনের টাকা। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জরুরি কিছু কাগজপত্র ও নগদ টাকা ছিল। বুধবার মানিব্যাগটি হারিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন খালিদ। 

এদিকে মানিব্যাগটি রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন ভ্যানচালক বাবুল। স্বাক্ষর জ্ঞান না থাকায় নিজের মালিককে জানান তিনি। পরে মালিকের সাহায্যে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন খালিদের সঙ্গে৷ নিউমার্কেটের বিশ্বাস বিল্ডারসের সামনে ভ্যানে মালামাল রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন খালিদের জন্য। অবশেষে মানিব্যাগটি ফিরিয়ে দেন খালিদকে৷ 

ভ্যানচালক বাবুল মিয়া ঢাকার ভেতর মালামাল টানেন। গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়। নয় বছর আগে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসেন তিনি। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন কামরাঙ্গীর চরে৷ 

বাবুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পারিবারিকভাবে নানান টানাপোড়ন ও অভাবের সংসার তার। দুই পুত্রসন্তানের জনক তিনি। বড় ছেলে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে৷ ছোট ছেলে কিডনি রোগে আক্রান্ত। 

অর্থের প্রয়োজন থাকলেও অন্যের হারিয়ে যাওয়া অর্থের দাবিদার তিনি নন বলে মন্তব্য করেন। বাবুলের ভাষায়, ‘দুই কুটি (কোটি) টাকা কুড়ায় পাইলেও আমি ওই টাকা ফিরাইয়া দিতাম। এর আগেও দুই লাখ টাকা পাইছিলাম। তাও দিয়া দিছি। ওই টাকা তো আমার না। আমি রাখুম ক্যান? যার টাকা হারাইছে, তার তো অনেক কষ্টের টাকা। অনেক দরকারি টাকা হইতে পারে।’

বাবুলের এই সততার পেছনেও রয়েছে একটি ছোট গল্প৷ তার ছেলের চিকিৎসার জরুরি কাগজ হারিয়ে গিয়েছিল। এক অচেনা ব্যক্তির মাধ্যমে সেই কাগজপত্র ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। এজন্য নিজেও চেষ্টা করেন কারও হারানো জিনিসপত্র পেলে ফিরিয়ে দেওয়ার৷ 

ছেলের অসুস্থতার কথা বললেও তার জন্য আর্থিক সাহায্য যাননি বাবুল। বরং ছেলের চিকিৎসার জন্য দোয়া চাইলেন এই দিনমজুর শ্রেণির মানুষটি। নিজের সততা আর সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে বাকি জীবন পার করতে চান তিনি। 

তবে বাবুল নিজ পরিবারকে দরিদ্র্য সীমারেখা থেকে টেনে তুলতে চান। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চান। তবে চাহিদা ও প্রয়োজনের বিপরীতে তার আয় খুবই সামান্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজের হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র ফিরে পাওয়া খালিদ বলেন, ‘বাবুলের মতো লোকেরা হয়ত সমাজে খুবই নগন্য৷ যান্ত্রিক শহরে এরকম সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে ভালো মানুষ পাওয়া খুব বিরল। আমার সামর্থ্য থাকলে আমি তাকে সাহায্য করতাম। সমাজে অনেকেই আছেন, যারা এই বাবুলদের সহযোগিতা করার সামর্থ্য রাখেন। আশা করছি, বিষয়টি তাদের নজরে আসবে। ভালো থাকুক বাবুল, ভালো থাকুক ভালো মনের মানুষগুলো।’ 

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/কারই/কেআর)