মালয়েশিয়ায় শিখে দেশে এসে প্রতারণা

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১৩ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

১৫ বছরের বেশি সময় মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন কাজী আল আমিন। দেশে ফিরে মালয়েশিয়ার আদলে খোলেন সুইসডার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠানটি। মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) স্টাইলে তিন ক্যাটাগরিতে সদস্য সংগ্রহ ও মহৌষধ ‘এস-ফ্যাক্টর’ বিক্রির নামে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেন।

‘এস-ফ্যাক্টর’ নামে মহৌষধে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখসহ ১৯ প্রকারের রোগের নিরাময় হয় বলে প্রচারণা করে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি এই হালুয়া করোনা প্রতিরোধী হিসেবেও কাজ করবে বলে প্রচারণা করে আসছিলো চক্রটি। গতকাল রাজধানীর পল্টন থেকে সুইসডার্ম নামে প্রতিষ্ঠানটি মূলহোতা কাজী আল-আমিনসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপরই এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাব-৪ এর সদর দপ্তরের কমান্ডিং অফিসার পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী বলেন, এই চক্রের সদস্যরা সারাদেশ থেকে দুই লাখের বেশি সদস্য সংগ্রহ করেছে। সদস্যদের কাছ থেকে ৪২০০ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বিনিময়ে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে এস-ফ্যাক্টর নামের মহৌষধ।

জয়িতা শিল্পী আরও বলেন, তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি কাজী আল আমিন ১৫ বছর মালয়েশিয়ায় প্রবাসী হিসেবে কাজ করেছে। সুইসডার্ম কোম্পানির নাম ও আইডিয়া মালয়েশিয়া থেকে রপ্ত করেছে। দেশে এসে পল্টনে অফিস নিয়ে সে এইভাবে প্রতারণা করে আসছিল। তারা দুই বছর ধরে প্রতারণা করছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও প্রতারণা আইনে দুটি মামলা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে জানতে পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেন্টু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, র‌্যাবের পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি ও একজন ভুক্তভোগী পল্টন থানায় মামলা করেছেন। দুই মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ জনকেই আসামি করা হয়েছে। আমরা কাজ করছি।

জানা গেছে, প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্য প্রতারণাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। এই প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী/সদস্য রয়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেকার ও অসচ্ছল তরুণ-তরুণী এমনকি শিক্ষিত লোকজনকে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার ও সাধারণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। যেহেতু টাকা দিয়ে সদস্য হতে হয়, সেহেতু নতুন সদস্য যত বেড়েছে কোম্পানিটি ততই ফুলে ফেঁপে ওঠেছে। এভাবেই প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে ২০-২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

প্রতারণা আরও যত কৌশল

গ্রেপ্তার কাজী আল-আমিন দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে কোম্পানির নতুন সদস্যদের কাছে কখনও প্রবাসী, কখনও বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে মনোনয়ন দেয়া হতো। আর এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো।

প্রতারণার শিকার লোকজনকে প্রলুব্ধ করে এবং তথ্যাদি সংগ্রহ করে নানা কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসা হতো। এদেরকে গ্রাহক প্রতি বা নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহক সংগ্রহের টার্গেট দিয়ে বিপুল অর্থ প্রদানের লোভ দেখানো হতো।

চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অভিজাত ও আকর্ষণীয় রেস্তোরাঁয় ভিকটিমদের নিয়ে এসে সভা-সেমিনার, লাঞ্চ ও ডিনার পার্টির আয়োজন করত। সেখানে সুইসডার্ম অ্যাপস-এ একাউন্ট খোলার আহ্বান জানানো হতো। ঘন ঘন অফিস পরিবর্তন করা ছিল তাদের আরেকটি কৌশল। প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোনো সাইনবোর্ড বা ঠিকানাও ব্যবহার করত না তারা। নতুন সদস্যদের পাঁচটি ক্যাটাগরির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। ১ ও ২ ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে ৪,২০০ ও ৬,২০০ টাকায় ১ প্যাকেট ওষুধ এবং ৩ ও ৪ ক্যাটাগরিতে ২৬,২০০ ও ৫৮,০০০ হাজার টাকায় ৬ থেকে ১৪ প্যাকেট এবং ৫ নম্বর ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকায় ২৮ প্যাকেট এস-ফ্যাক্টর দেয়া হতো।

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই

র‌্যাব বলছে, কোম্পানিটির সব কার্যক্রমই প্রতারণামূলক। পণ্যগুলো বাজারজাত করতে বিএসটিআই এবং ঔষধ প্রশাসনের কাছ থেকে তারা কোনো অনুমতি নেয়নি। পণ্য আমদানি সংক্রান্ত কোম্পানির সঙ্গে তাদের বৈধ কাগজপত্র নেই। এস-ফ্যাক্টর ছাড়াও সৌন্দর্যবর্ধনকারী কয়েকটি প্রসাধনীও তারা উচ্চমূল্যে বিক্রি করত। এগুলো শরীর ও ত্বকে ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এআর/এমআর