দামুড়হুদায় পাটের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে খুশি চাষিরা
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদও হয়েছে বেশি। চাষিরা এবার ওজন ছাড়া ভেজা পাট বিক্রি করছেন ফড়িয়াদের কাছে। তাছাড়া গত মৌসুমের চেয়ে এবার বাজার দর ভালো পাওয়ায় বেজায় খুশি উপজেলার পাটচাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর বেশি। গত বছর ফলন হয়েছিল বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ মণ। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে পাটের ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি ৯-১০ মণ।
গত বছর বাজারে মণ প্রতি পাটেরে দর ছিল ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এবার পাটের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে। বিঘা প্রতি পাট থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভই শেষ নয়, পাটখড়িও বিক্রি হচ্ছে পাটের সমপরিমাণ দামে। এতে করে এবার বিঘাপ্রতি লাভ হচ্ছে বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে উপজেলার আড়তগুলোতে পাটের তেমন আমদানি নেই।
জানা গেছে, অন্যান্য বছর কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট শুকিয়ে আড়তে বা ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করত। তবে এবার ফড়িয়ারা ভেজা পাট ক্রয় করছেন। পানিতে জাগ দেয়ার পর পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়িয়ে সেই ভেজা পাট আঁটি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এগুলো ওজন ছাড়াই কৃষক-ফড়িয়াদের আনুমানিক হিসাব মতো 'গাইট' হিসাবে বিক্রি করা হয়। মানের প্রকারভেদে ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা করে গাইট কিনে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা।
সাধারণত আড়াই গাইটে এক মণ পাট হয়ে থাকে। এই পাট তারা শুকিয়ে আড়তে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। অনেক ফড়িয়া এভাবে ক্রয় করে বাড়তি লাভের আশায় পাট মজুদ করছেন।
উপজেলার দশমী পাড়ার পাটচাষি মাহাবুব বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। জমি চাষ, এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। শুকনা পাট হয়েছে প্রায় ৯ মণ। যা বিক্রি করলে প্রায় ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। খরচ বাদ দিয়ে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে। এছাড়া পাটখড়িও প্রায় ৫/৭ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। এক বিঘা জমির পাট ও পাটখড়ি থেকে প্রায় তার ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা লাভ হবে।
জয়রামপুরের জয়নাল ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। তার দুই বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো। পাট হয়েছে ২২ মণ। বর্তমান বাজারে পাট ও পাটখড়ি বিক্রি করলে সকল খরচ বাদ দিয়ে ৫২/৫৩ হাজার টাকা লাভ হবে।
দামুড়হুদা বাজারের আড়তদার ইউনুছ আলি জানান, বাজারে নতুন পাট উঠলেও তেমন আমদানি হয়নি। ফড়িয়ারা এবার ভেজা পাট ওজন ছাড়াই আনুমানিক হিসাবে ক্রয় করে নিজেরা শুকিয়ে বেশি দামে বিক্রির আশায় মজুদ করছেন। ফলে দামুড়হুদা বাজারে পাটের আমদানি কম।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, দামুড়হুদা উপজেলার এলাকার মাটি পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় পাটের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। তাছাড়া এবার পাটের বাজার দরও গতবারের থেকে ভালো হওয়ায় চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/এলএ)