জীবিকা নিয়ে বিপাকে বিরামপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকশ পরিবার

নূরে আলম সিদ্দিকী নূর, বিরামপুর (দিনাজপুর)
 | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:২৯

কেউ অন্যের জমিতে বা বাড়িতে শ্রম বিক্রি করতেন। আবার কেউবা গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে দিন শেষে মাটির জীর্ণ বা নড়বড়ে ঝুপড়ি ঘরে কষ্টে পার করতেন নির্ঘুম রাত। এমনই হতদরিদ্র কয়েকশ পরিবার পেয়েছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পাকা বাড়ি। বাড়ি পেয়ে তারা সবাই খুশি হলেও নতুন জায়গায় এসে সংসারের খরচ মেটানোর মত কাজ না পেয়ে জীবিকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অধিকাংশ সুবিধাভোগী।

জানা যায়, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১০টি জায়গায় সরকারি খাস জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে ‘জয়বাংলা ভিলেজ’-এ ৭৬৫টি পাকা বাড়ি বন্দোবস্ত করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে খানপুর ইউনিয়নের বুচকি গ্রামে ২৯৬টি পরিবার, পশ্চিম জয়দেবপুর গ্রামে ২২২টি পরিবার, ডাঙ্গাগ্রামে ৫৬টি পরিবার ও রতনপুর গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে ৩১টি পরিবার রয়েছে। বিনাইল ইউনিয়নের দেশমা গ্রামে নলপুকুর পাড়ে ৮১টি পরিবার ও কৃষ্ণবাটি গ্রামে ১৬টি পরিবার রয়েছে। এছাড়াও কাটলা ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামে ১৭টি পরিবার, দিওড় ইউনিয়নের বাঘারপাড়া ও বড় গোপালপুর গ্রামের ২টি পুকুরপাড়ে ২৮টি পরিবার এবং পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে ১৮টি পরিবার রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়ে এখানকার অনেকেই তাদের পূর্বের আবাসস্থল ছেড়ে থেকে ১০-১৮ কিমি দূরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতে উঠেছেন। হঠাৎ করে তারা নতুন জায়গায় আসায় কাজ না পেয়ে অনেকেরই আয়ের পথ বন্ধ হয়েছে। আবার অনেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন দূরের পথ পাড়ি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নতুন জায়গায় পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা খাবার জোটাতে অনেকেই এখন বেসামাল। অনেকে সেখানে কাজ না পেয়ে কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরে পাড়ি জমিয়েছেন। আবার কেউ কেউ তাদের পূর্বের গ্রামের এলাকায় সপ্তাহে ৪/৫ দিন কাজ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফিরে আসেন।

খানপুর ইউনিয়নের বুচকি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এ সুবিধাভোগী মহেন্দ্র পাহান বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি এ ইউনিয়নের দক্ষিণ শাহাবাজপুরে। পাঁচ মাস হল এখানে এসেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে প্রায় ৬-৭ কিমি দূরে ফুলবাড়ি উপজেলায় রাজমিস্ত্রির শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। ফলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই গ্রামের বাড়ি যাই। এতে করে প্রতিদিন ভ্যানভাড়া ও অন্যান্য খরচসহ একশ টাকারও বেশি খরচ হয়। সরকার থেকে কোনো কাজের সুযোগ দিলেই আমার মত অনেকেই দুবেলা খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাঝখানে প্রায় ১৬ বিঘা, কৃষ্ণবাটি গ্রামের প্রকল্পে এক বিঘা, রতনপুর গ্রামের প্রকল্পে প্রায় দুই বিঘা, বাঘারপাড়া ও বড় গোপালপুর গ্রামের প্রকল্পে ছয় বিঘা আয়তনের পুকুর রয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা দাবি করছেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে এসব সরকারি খাস পুকুর তাদেরকে সমিতির মাধ্যমে লিজ দিলে সেখানে সমন্বিত মাছ চাষ ও পুকুরপাড়ে শাক-সবজি আবাদ করে তারা আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। এছাড়া তারা বলছেন, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মাঝে মাছচাষ, কাপড় সেলাই ও হস্তশিল্পের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে তাদের জীবনমানের পরিবর্তন হবে।

দেশমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী আজাহার আলী (৭৫) বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মত গৃহহীনকে ঘর দিয়ে অনেক উপকার করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে নতুন জায়গায় আসায় আমি কাজ খুঁজে পাচ্ছি না। এতে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাঝখানের খাসজমিতে প্রায় ১৬ বিঘা জলকরের একটি পুকুর আছে। লিজের মাধ্যমে এ পুকুরটি আমাদেরকে বন্দোবস্ত দিলে আমরা সেখানে মাছ চাষ ও সবজি আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতাম।’

৩ নম্বর খান ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী বলেন, ‘খানপুর ইউনিয়নের চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০৫টি পরিবার রয়েছে। তারা এখানে এসে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেলেও অনেকেই এখনও সংসার চলার মত কাজের ব্যবস্থা করতে পারেননি। কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আয়ের ব্যবস্থা করে দিতে উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, ‘প্রকল্পের আশপাশের সরকারি খাসপুকুরগুলো সমিতির মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মধ্যে দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও উপজেলার সমবায় অফিস, যুব উন্নয়ন অফিস, কৃষি অফিস এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক অফিস থেকে কর্মমূখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের দক্ষ করে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :