সন্ধ্যায় ভারতে আঘাত হানবে 'গুলাব', বাংলাদেশেও ঝড়-বৃষ্টির আভাস

গুলাবের সর্বশেষ অবস্থান ও গতিপথ।

পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতিবেগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজকের মধ্যে এটি আছড়ে পড়তে পারে ভারতের উপকূলে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে ঝড়ো হাওয়া ও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

রবিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান ঢাকাটাইমসকে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উপকূলের দিকে যাচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সর্তকতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একই কারণে ঢাকাসহ সারা দেশেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আজ সন্ধ্যায় উড়িষ্যার গোপালপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের মাঝামাঝি কলিঙ্গপত্তনমের কাছে আছড়ে পড়তে পারে এ ঘূর্ণিঝড়। এর প্রভাবে কলকাতাতেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে ভারী বৃষ্টি হবে। এরই মধ্যে সোমবার উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার কথা। সেটি শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। মঙ্গলবার সেটি উপকূল এলাকায় পৌঁছবে। তার প্রভাবে মঙ্গল ও বুধবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, মেদিনীপুর, ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামসহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হবে।

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস থেকে সমুদ্রবন্দরগুলোর সতর্কতা বার্তায় জানানো হয়েছে- শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় গুলাব চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল। রবিবার সকালে তা আরও সরে গিয়ে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৫২০ কিলোমিটার দূরে। এখন ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দূরত্বে অবস্থান করছে। মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এখন ৫২৫ দক্ষিণে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার থেকে এগিয়ে এখন ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়েরর কেন্দ্রস্থলে ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম/উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যা, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিবজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে।

তাপমাত্রা: সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা (তিন দিন) বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/আরকে/ইএস)