চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন নাবি জাতের আম ইলামতি

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:৪৩

জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সীমান্তবর্তী জেলা আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাবি জাতের আরও এক ধরনের আম যোগ হলো, যার নাম হিসেবে প্রস্তাব করা হয় ইলামতি। এই জাতের আমের সন্ধান পাওয়া গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায়। নাবি জাতের আমগুলোর মধ্যে ইলামতি জাতের আমটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদরা। আর কৃষকরা বলছেন অসময়ে এই আম হওয়ায় আমের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বেলাল বাজার এলাকার আশরাফুল আলম দীর্ঘদিন ধরে আম বাগানের সঙ্গে জড়িত। অন্যান্য আমের পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ বছর আগে তার বাপ-দাদাদের আলমের পুরনো গাছের গুটি জাতের আমের কলম করে নতুন নাবি জাতের ১০-১৫ আমগাছ গড়ে তুলেন। যেগুলো দ্বিতীয় প্রজন্মের। তার কাছ থেকে কলম বা ডগা নিয়ে নাচোল উপজেলার বরেন্দ্রভূমিতে ১৮০টি এবং সদর উপজেলার আমনুরায় ১০০টি বেশি গাছ দিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের আম বাগান তৈরি করেন। এতদিন নামহীন গুটি জাতের আম হলেও এখন তা সুমিষ্ট-সুস্বাদু ও নাবি জাতের আম হওয়া তার নাম রাখ হয়েছে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রকে সম্মান রেখে ইলামতি।

নাবি জাতের এই আমের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় আম চাষিদের মাঝে। আর অসময়ে আমের চাহিদা ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে ইলামতি জাতের আমটি।

আগ্রহী আম চাষি আব্দুর রহিম জানান, ইলামতি জাতের আমের কথা শুনে আমি এই বাগানে কলম বা ডগা নিতে এসেছি। আমের দাম ভালো এবং দেরিতে আমগুলো নাকি পাকে। এই জন্য এ নতুন জাতের আমার বাগান করার জন্য ডগা বা কলম নিতে এসেছি। আর এজাতের আমের বাগান করবো।

আম চাষি মাইনুল ইসলাম জানান, আমি বন্ধুর কাছে নাবি জাতের আম ইলামতির নাম শুনেছি। আজ এই বাগান এসে আম এবং শায়ন (কলম বা ডগা) কিনলাম। যাতে আমি এজাতের আমের বাগান করতে পারি। আর অসময়ে বেশি দামে আম বিক্রি করে লাভবান হয়।

আম চাষি আব্দুল আওয়াল জানান, আমার জানা মতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেরিতে আম আশ্বিনা, গৌড়মতি রয়েছে। এর সাথে আরো একটি নতুন জাতের আম ইলামতি আম পাওয়া গেছে। সেই আমের ডগা নিতে এসেছি। অসময়ে আমের চাহিদা পুরোন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বাগান করার পরিকল্পনা করি।    

গোমস্তাপুর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রথম দিকে নামহীন গুটি জাতের আম হলেও গত চার বছর ধরে কৃষি বিভাগ ও হর্টিকালচার সেন্টার যৌথ গবেষণা শুরু করে আমটি উপর। গবেষণায় দেখা গেছে আমটিতে রোগ বালাই কম, সেরকম পরিচর্যা ছাড়াই সব আবহওয়াতেই এর উৎপাদনও স্থানীয়ভাবে ভালো।

হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. হাবিবুল্লাহ জানান, আমটির গড় ওজন ৪০০ গ্রাম থেকে ৪৫০ গ্রাম। মিষ্টতা ২১ শতাংশ এবং ভক্ষণযোগ্য অংশ ৮১ শতাংশ।

হাবিবুল্লাহ  আরও জানান, আম সুস্বাদু হওয়ায় অসময়ে আম প্রাপ্তি এবং বছরব্যাপী আম উৎপাদনে ‘ইলামতি’ ভিন্ন মাত্রা আনতে পারে।

হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোজদার হোসেন জানান, স্থানীয় হর্টিকালচার সেন্টার, আম গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি বিভাগের গবেষক এবং কৃষিবিদরা জাতটির মুক্তায়নে এরই মধ্যে নাম প্রস্তাব করেছেন ‘ইলামতি’। মানুষের শরীরে ভিটামিন এ ঘার্তি রয়েছে। অন্যান্যে উপাদানের সাথে এই আমটিতে ভিটামিন এ রয়েছে। ভিটামিন এ এর ঘার্তি পুরণসহ বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও রয়েছে।

বছরব্যাপী যাতে আমের চাহিদা পুরণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছেন আম সংশ্লিষ্টরা। এখন পর্যন্ত নাবি জাতের গৌড়মতি আম উদ্ভাবিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/কেএম)