শুভ জন্মদিন একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি

ইলিয়াস সানি
| আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৪৭ | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৪৭

আলোকবর্তিকা হাতে মুজিব কন্যা থেকে আজকের বিশ্বনেত্রী হয়ে উঠেছেন আমাদের আশার বাতিঘর হাসু আপা। লড়াই করে যাচ্ছেন স্বজনহারা শেখের বেটি, আমৃত্যুই লড়ে যাওয়ার প্রত্যয় তাঁর। পরিবার ও স্বজনসমেত এক রাত্রিতে ২৬ জন স্বজনহারা শেখ হাসিনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইতোমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের কণ্ঠস্বরের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পেরেছেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী সাড়ে তিন বছর নির্ঘুম থেকে সরকার পরিচালনা করেছেন পিতা মুজিব। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ এবং ভয়াবহতা ছিল অবর্ণনীয়।

এই বিষয়ে মুজিবনগর সরকার ও বঙ্গবন্ধুর সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সচিব এইচ টি ইমামের তাঁর "বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫" গ্রন্থে লিখেছেন- "পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, সারাদেশের মানুষজনের হাতে তখন মাত্র চার কোটি টাকার মতো ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার কোনো মজুদ বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিল না। [...] মাত্র ১০ হাজারের মতো নথি দিয়ে শুরু হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়। বঙ্গবন্ধু যেদিন টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করেন সেদিন ঢাকা জেলা থেকে মাত্র তিনটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল।"

স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে- বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের স্বীকৃতি আদায়, ভারতীয় সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা, দেশের সকল ব্যাংক-বীমা-শিল্প কারখানা জাতীয়করণ, মাত্র ১১ মাসের মধ্যে সংবিধান উপহার, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুসংহতকরন, প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন, সেনা-নৌ-বিমানবাহিনীর উন্নয়ন, অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন, পাকিস্তানি দালালদের আইনের অধীনে আনতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারকার্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ প্রণয়ন, পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ফেরত আনা, রক্ষীবাহিনী গঠন, নারী পুনর্বাসন বোর্ড, তিনদলীয় ঐক্যজোট গঠন(বাকশাল), হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে পদক্ষেপ, রাষ্ট্রপতি ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ও সামুদ্রিক সম্পদরাজি সুরক্ষা, টিসিবি গঠন, কনজুমার সাপ্লাইজ কর্পোরেশন অ্যাক্ট- ১৯৭২, জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণযজ্ঞের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, স্বাস্থ্যখাতে ঐতিহাসিক অবদান, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, টেক্সটাইল খাতের উন্নয়ন, কৃষি সম্প্রসারণ ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, ১১,০০০ প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ ৪০,০০০ প্রাথমিক স্কুল সরকারিকরণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা সহ এক বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তারপর নিকেষ কালো অন্ধকার। ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো ১৯০ বছরের জন্য। ১৯৪৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা আরও ২১ বছরের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলো।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট!

আবারও ২১ বছরের জন্য সোনার বাংলায় শকুনের থাবা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আবারও পিছনে হাঁটতে শুরু করে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে।

আলোকবর্তিকার প্রত্যাবর্তন। আবারও বাঙালি আশা জাগানিয়া ডাক শুনতে পায়। গল্পটা সহজ ছিলো না। স্বৈরশাসকদের কাছ থেকে জনগণের হাতে ক্ষমতা সমর্পণ করতে শেখ হাসিনার লেগেছিলো ১৫ বছর। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ১৯৯৬। একে একে নবরূপে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের পথে শেখ হাসিনা ছুটে চলছিলেন দুর্নিবার। মুজিব হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পুনঃ সূচনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, জীবিকার ব্যবস্থা সহ আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠনে শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি সারা বিশ্ব মাত্র ৫ বছরেই আচঁ করতে পেরেছিলে। তারপরও আবারও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান। আবারও লড়াই-সংগ্রাম।

২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে শেখের বেটি বাংলা ও বাঙলিকে নিজের স্বরুপ চিনিয়ে যাচ্ছেন দিগ্বিদিক। জাতির পিতা হত্যাকারী ও যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে নিজের দৃঢ়তার প্রমাণ দিলেন নবউদ্যমে। প্রতিনিয়ত নিজেকেই ছাপিয়ে যাচ্ছেন স্বীয় মহিমায়।

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল ৫ টি দেশের মধ্যে একটি, রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, মাথাপিছু আয় প্রায় ২৩০০ ডলার। করোনা মহামারী ক্রান্তিলগ্নেও জীবন ও জীবিকার এক অপূর্ব মিশেলের মাধ্যমে প্রাণহানি বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। বহু প্রকল্প ইতোমধ্যেই আলোর মুখ দেখেছে।

সারা বিশ্বের অর্থনীতি যখন করোনা সংকটে চরমভাবে সংকোচিত হচ্ছে, ঠিক তখনও শেখ হাসিনা সরকারের চলমান মেগা প্রজেক্ট গুলোর অন্যতম হলো- পদ্মা সেতু প্রকল্প, ঢাকার মেট্রোরেল, দেশব্যাপী ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, বিআরটি প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রুপপুর পারমানবিক, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সেতু, খুলনা রেল সেতু, বেকুটিয়া সেতু, মিরপুর-কালশী ফ্লাইওভার, কালনা সেতু, ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু, ঢাকা - টাঙ্গাইল ৪ লেন, বনানী-এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেসওয়ে, ভাঙা-মাওয়া রেল, লোহালিয়া সেতু, নড়াইল-খুলনা সেতু, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল, কুলাউড়-শাহবাজপুর রেল,বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক (সিলেট,রাজশাহী), খুলনা-মংলা রেলওয়ে, জয়দেবপুর-ঢাকা ডাবল রেললাইন, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, যমুনা রেল সেতু, ঢাকা -মাওয়া রেল, ঢাকা - রংপুর ৪ লেন, প্রস্তাবিত গাজীপুর-ময়মনসিংহ ১০ লেন, যশোর-ঝিনাইদহ ৪ লেন, পায়রা বন্দর ড্রেজিং, মংলা বন্দর ড্রেজিং, আমিনবাজার ৮ লেন সেতু, রংপুর -লালমনিরহাট ৪ লেন, ভাঙা-যশোর রেল, কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকীকরণ, খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা-ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা বাইপাস, পতেঙ্গা বে টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শিল্প অঞ্চল,ঢাকা আরিচা ৪ লেন, তৃতীয় মেঘনা সেতু।

এ যেন পিতা মুজিবেরই এক অনন্য প্রতিচ্ছবি শেখ হাসিনা। শুভ জন্মদিন আধুনিক বাংলাদেশ শব্দের প্রতিশব্দ, একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি হাসু আপা।

লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :