মেট্রো ও ম্যাকসন স্পিনিং শেয়ারদর হুহু বৃদ্ধি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:১৮

২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ম্যাকসন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের সম্পদ ও আয় প্রতি বছর কমছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে মুনাফা। ২০২০ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। গত প্রান্তিকেও শেয়ার প্রতি আয় আশানুযায়ী নয়। তবু কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে হুহু করে।

অন্যদিকে একই মালিকানাধীন মেট্রো স্পিনিং লিমিটেড শেয়ার হোল্ডারদের টানা কয়েক বছর নামমাত্র ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এজন্য জেড থেকে বি ক্যাটাগরিতে অবস্থান। ধারাবাহিভাবে কমছে তাদের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য, নিট মুনাফা ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস)। তবুও মেট্রো স্পিনিং লিমিটেডের শেয়ারদর হু হু করে বাড়ছে। গত পাঁচ মাসে বেড়েছে ৩১৯ শতাংশ। কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে বড় কারসাজি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

ম্যাকসন স্পিনিং মিলসের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ম্যাকসন স্পিনিং মিলস লিমিটেড ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস ল্যভাংশ দিয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোন লভ্যাংশ না দিলেও ২০১৯ ও ২০২০ সালে মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে বি ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

কোম্পানিটির মুনাফাও ক্রমাগত কমছে। ২০১৮ সালের জুন শেষে ম্যাকসনের মুনাফা ছিল ১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এটি ২০১৯ সালে কমে দাঁড়ায় ২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির লোকসান করে ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

মুফিজুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভালো ব্যবসা করতে না পেরে লোকসানে থাকা ম্যাকসন স্পিনিং এর শেয়ার দর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে হু হু করে বাড়ছে। গত কয়েক বছর লভ্যাংশও ভালো দিতে পারছে না। তারপর এমন দর বাড়ায় পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে আমার ধারণা।’

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, ম্যাকসন স্পিনিংয়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) প্রতি বছর কমতির দিকে। ২০১৭-১৮ তে কোম্পানিটির ইপএস ছিল ০.৪৯ টাকা, ২০১৮-১৯ শেষে কমে ০.১২ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ০.৩৭ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস দেখানো হয়েছে ০.৬৪ টাকা।

ম্যাকসন স্পিনিংয়ে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) প্রতি বছরই কমছে। ২০১৭ সালের জুন শেষে এনএভি ছিল ১৯.৫৫ টাকা, ২০১৮ সালের জুনে কমে ১৯.১০ টাকা, ২০১৯ সালের জুন শেষে ১৮.৭২ টাকা এবং ২০২০ সালের জুন শেষে এনএভি কমে দাঁড়ায় ১৮.২০ টাকা।

২০০৯ সালে ম্যাকসন স্পিনিং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি সময় অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পরিশোধ মূলধন দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। রিজার্ভ রয়েছে ১৯৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এবং কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৯টি।

চলতি বছরের জুন শেষে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ১৫.১০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৫৪.৯০ শতাংশ।

কেন শেয়ার দর কেন বাড়ছে জানতে চাইলে ম্যাকসন স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব নূর মোহাম্মদ ঢাকা টাইমসকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার দর কেন বাড়ছে? সেগুলো যে কারণে বাড়ছে ম্যাকসনও একই কারণে বাড়ছে।’

কী কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আর তাছাড়া শেয়ার দর বাড়া-কমার ক্ষেত্রে কোম্পানির কিছু করার থাকে না। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। এটা মার্কেট ম্যাকানিজমের কারণে হচ্ছে।

অন্যদিকে বি ক্যাটাগরির মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ারদর গত ১২ এপ্রিল মেট্রো স্পিনিং এর শেয়ারদর ছিল ৭.৫ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার শেয়ারটির দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৪ টাকা। অর্থাৎ গত ৫ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৩.৯ টাকা বা ৩১৯ শতাংশ। ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে নানা কোম্পানির শেয়ারদর হুটহাট করেই বাড়ছে। এক্ষেত্রে কারসাজি হচ্ছে বলে বাজার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বিশ্বাস।

অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মূল মালিকপক্ষেরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকে। তারা কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করেন। অনেক সময় বাজার জুয়াড়ি চক্রের সঙ্গে মিলে মুনাফা বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেখান।

মেট্রো স্পিনিং এর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১৮ পয়সা; ২০১৭ সালে উল্টো শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৬৪ পয়সা; ২০১৮ সালে শেয়ার প্রতি আয় মাত্র ৯ পয়সা; ২০১৯ সালে ২১ পয়সা এবং ২০২০ সালে ইপিএস আরও কমে দাঁড়ায় ৮ পয়সা। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬২ পয়সা।

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ২০১৬ সালে ছিল ১৬.১২ টাকা; ২০১৭ সালে কমে দাঁড়ায় ১৫.৮৮ টাকা; ২০১৮ সালে আরও কমে ১৫.৫৩ টাকা; ২০১৯ সালে আরও কমে ১৪.৮৮ টাকা এবং ২০২০ সালে আরও কমে দাঁড়ায় ১৪.৫৩ টাকা।

মেট্রো স্পিনিং এর নিট মুনাফা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে নিট মুনাফা ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টাকা; ২০১৭ সালে উল্টো লোকসান হয় ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা; ২০১৮ সালে নিট মুনাফা হয় সাড়ে ৫৬ লাখ টাকা; ২০১৯ সালে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে নিট মুনাফা মাত্র ৪৭ লাখ টাকা।

হাবিবুর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, গত কয়েক বছর মেট্রো স্পিনিংয়ের ব্যবসায়ে তেমন উন্নতি নেই। সব সূচক নিম্নমুখী। শেয়ারহোল্ডারদের অশানুযায়ী লভ্যাংশ দেয়নি। কয়েক বছর ধরে নামমাত্র লভ্যাংশ দিচ্ছে। এরপরও ৭ টাকার শেয়ার এখন ৩১ টাকা। এর পিছনে কারসাজি চক্র রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে দ্রুত এই চক্রকে খুঁজে বের না করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বে।

শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মেট্রো স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব মোজাম্মেল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, কেন শেয়ারের দর বাড়ছে তার কারণ তার জানা নেই।

২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মেট্রো স্পিনিং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য প্রথম ছয় বছর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। গত ৪ বছর টানা ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মেট্রো স্পিনিংয়ের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা; পরিশোধিত মূলধন ৬১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬ কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ২৭৫ টি। রিজার্ভ রয়েছে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

২০২০ সালের ৩০ জুন হিসাবে মেট্রো স্পিনিং স্বল্প মেয়াদী ঋণ রয়েছে ৬৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের রয়েছে ৩০.০৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩০.৭৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৯.১২ শতাংশ।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/আরএ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :