টাকা সাশ্রয়, এখন অনেকের ভরসা টিসিবি

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৯

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস

বাজারে যখন তখন দাম চড়ে এমন নিত্যপণ্যের মধ্যে তেল, পেঁয়াজ, ডাল ও চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ— টিসিবি। সংসারে অপরিহার্য এসব পণ্য বাজারের চেয়ে কম মূল্যে কিনতে অনেকেরই ভরসা টিসিবির ট্রাকসেল।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি আগে বাজার চাহিদার মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ সরবরাহ করলেও এখন সেটি গিয়ে ঠেকেছে ১২ শতাংশে। সক্ষমতা বাড়ানো হলে টিসিবি বাজারের চেয়ে কম দামে আরো বেশি নিত্যপণ্য বিক্রি করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাজারে ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া অতি মুনাফা করাও বন্ধ হবে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে টিসিবির ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাদ্দকৃত নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য নিয়ে বিক্রির জন্য নির্ধারিত পয়েন্টে ট্রাক পৌঁছানোর আগেই লোকজন অপেক্ষায় থাকেন। আর বিক্রি শুরুর দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পণ্য শেষ হয়ে যায়।

তবে ঢাকার শ্যামলী কলেজগেট এলাকায় টিসিবি ট্রাকসেলের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম রনি ঢাকা টাইমসকে জানান, পণ্যের চেয়ে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকায় প্রতিদিনই বহু মানুষ খালি হাতেই ফেরত যান। তাদের গ্রাহক প্রতি যে পরিমান পণ্য নির্ধারন করে দেওয়া হয় ঠিক সেই পরিমান পণ্যই জনপ্রতি বিক্রি করা হয়।

ঢাকা টাইমসকে রনি বলেন, ‘অনেকেই আবার একবারে বেশি কিনতে চান, যদিও পণ্যের তুলনায় ক্রেতা চাহিদা বেশি থাকাই সেটা সম্ভব হয় না। যে পরিমাণ চাহিদা থাকে তাতে বিক্রি শুরুর দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ট্রাকসেল শেষ হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার সকালে এই পয়েন্টে লাইনে দাঁড়ানো সজীব হোসেন মিরপুর থেকে আসেন পণ্য কিনতে। বাজারে দাম চড়া থাকায় এখান থেকে ডাল ও চিনি কিনে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সজীব হোসেন।

ঢাকা টাইমসকে সজীব বলেন, ‘এখান থেকে পণ্য কিনতে আসছি কারণ অনেকটা কম দামে পাবো। বাজারে যে দাম, তার থেকে একটু কষ্ট হলেও এখান থেকে পণ্য নিলে খরচটা বাঁচে। আমার মতো স্বল্প আয়ের লোকের জন্য এটা একটা ভরসা।’

বাজার থেকে দুই লিটার সয়াবিন তেল তিনশ টাকা না কিনে একশ টাকা সাশ্রয় করতে টিসিবি থেকে কিনতে আসছেন আমজাদ হোসেন। মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের এই বাসিন্দা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার আয় খুবই সামান্য। বাজারে গেলে একটা কিনে আরেকটা কেনার পয়সা থাকে না। এক লিটার তেল কিনতে গেলে দেড়শ টাকা চলে যায়। তাই এখানে কিনতে আসছি টাকা বাঁচাতে।’

হুমায়ুন রোড থেকে আসা রফিক মিয়া, শিশু মেলা এলাকা থেকে আসা  রাবেয়া খাতুন, শ্যামলী এলাকার মাছুমা বেগমের ভাষ্যও আমজাদ হোসেনের মতো। তারা সবাই কম মূল্যে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যদিও তাদের কণ্ঠে শেষ পর্যন্ত পণ্য পাবেন কিনা সেই সংশয়।

মাছুমা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আগেও একবার এসে ফেরত গেছি, কিনতে পারি নাই। লাইন আমার পর্যন্ত আসার আগেই সব নাকি শেষ হয়া গেছিল। আমাদের মতো গরীবদের জন্য কম মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ রাখলে খেয়ে পরে বাঁচতে পারি।’

কলেজগেইট এলাকায় ট্রাকসেল করছে টিসিবি ডিলার বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোর। তাদের ট্রাকে তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) প্রতি কেজি ৫৫ টাকা আর পেঁয়াজ (ভারতীয়) প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব পণ্য টিসিবির থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখানে খুচরা বাজারে তেল প্রতি লিটার ১৫০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) প্রতি কেজি ৮৫ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১০০ টাকা আর পেঁয়াজ প্রতি কেজি দেশি ৪৫ টাকা ও ভারতীয় ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি কম দামে দিলেও বাজারে বিক্রেতা বেশি দামে কেন বিক্রি করছে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার আক্তার জেনারেল স্টোরের মালিক আক্তার হোসেন বলেন, ‘কেন বেশি কেন কম সেটা বলতে পারবো না। তবে টিসিবির গাড়ির কারনে ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ আমার এখানে ক্রেতাদের চাহিদা কম।’

ঢাকা টাইমসকে আক্তার হোসেন বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যেদিন টিসিবির গাড়ি আসে না সেদিন যা বিক্রি হয় গাড়ি এলে বিক্রি হয় তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। সবাই কম দামে নিত্য পণ্য কিনতে টিসিবির গাড়িতেই লাইন ধরে।’

এদিকে আজ থেকে এক সপ্তাহ রাজধানীসহ সারা দেশেই টিসিবির ট্রাকসেল বন্ধ থাকবে। অক্টোবরের ৬-৭ তারিখের দিকে আবারো ট্রাকসেলে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন টিসিবির উর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী হুমায়ুন কবির।

টিসিবির এই মুখপাত্র ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করছে। আগে এটি ছিল মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেলে পণ্য বিক্রির পরিমানও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।’

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ট্রাকসেল কদিন বন্ধ থাকবে। অক্টোবরের ৬-৭ তারিখে আবারও শুরু হবে। বরাবরের মতো ট্রাকসেল শুরুর আগে জানিয়ে দেওয়া হবে। টিসিবির পণ্য সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি মাসেই বিক্রি হয়েছে। কোনো মাস বাদ যায়নি।’

সাধারণের জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির আওতা বাড়াতে টিসিবির কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বর্তমানে টিসিবির ডিলার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। রমজানের সময় ৫০০টি ট্রাকের মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হয়। এছাড়া সারা বছর ৩০০ থেকে ৪০০টি ট্রাকে বিক্রি চলে।’

(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/আরকে/ডিএম)