লন্ডনে বর্ণবাদী দাঙ্গার ৮৫তম বার্ষিকীতে সমাবেশ

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন
 | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১৬:১৭

“নো টু রেসিজম”, “নো টু ফ্যাসিজম”, “ইউনাইট অ্যাগেইনস্ট দি ফার রাইট”- এসব লেখা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত মানুষ ১৯৩৬ সালের ক্যাবল স্ট্রিটের ভয়াবহ বর্ণবাদী দাঙ্গার ৮৫তম বার্ষিকীর বর্ণবাদবিরোধী সমাবেশে অংশ নেয়।

বাঙালি অধ্যুসিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকাটি ব্রিটেনের মাইগ্রেন্ট কমিউনিটি এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৩৬ সালের ৪ অক্টোবর মাইগ্রেন্ট ইহুদী কমিউনিটির বিরুদ্ধে তখনকার সময়ের বর্ণবাদী নেতা ওজওয়াল মজলির নেতৃত্বে হামলা চালালে ব্রিটেনের শান্তিপ্রিয় ইংলিশ ও আইরিশরা মাইগ্রেন্ট কমিউনিটির পাশে দাঁড়ায়।

ভয়াবহ এই রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় শতাধিক পুলিশসহ হাজার হাজার মানুষ আহত হয়। এরপর বর্ণবাদীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় বাঙ্গালি কমিউনিটি। ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে বর্ণবাদী গ্রুপ বাঙালি অধ্যুসিত ব্রিকলেন এলাকায় হামলা চালিয়ে আলতাব আলী নামে একজন বাঙালি গার্মেন্টস শ্রমিককে হত্যা করে। শুধু আলতাব আলীই নয়, আরও কয়েকজন বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয়েছে বর্নবাদীদের হাতে।

আলতাব আলী হত্যার পর প্রায় ১০ হাজার মানুষ আলতাব আলীর কফিন নিয়ে মিছিল নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে। এর পর থেকে বর্ণবাদীরা টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও ইংলিশ ডিফেন্ট লীগ নামে তারা মাঝে মধ্যে মাইগ্রেন্ট কমিউনিটির উপর চড়াও হয়।

গত রবিবার লন্ডন সময় দুপুর ১টায় ক্যাবল স্ট্রিটের বর্ণবাদী দাঙ্গার ৮৫তম বার্ষিকীতে কয়েকটি সংগঠন বর্ণবাদবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে। দুপুর ১টায় প্রতিবাদকারী সংগঠনগুলোর সদস্যরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমবেত হন ক্যাবল স্ট্রিটে। এরপর সেখান থেকে র‌্যালি নিয়ে চলে যান সমাবেশস্থল ক্যাবল স্ট্রিট পার্কে এই স্থানেই বর্ণদাবী দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল ১৯৩৬ সালে।

বিকাল ২টায় ডেবিড রুসেনবার্গ ও জুলি বেগমের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক ব্রিটিশ লেবার লিডার জেরেমি করবিন এমপি, শেরম গ্রাহাম (ইউনাইট), বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লাইম পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসনের ব্রিটিশ এমপি আফসানা বেগম, রাব্বি হ্যারসেল গ্লুক, মাইক লায়ন (আরএমটি), টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, জগিন্দার বানিস (আই-ডবলিও-এ-জিবি), মারলিন সিডাওয়ে (আই-বি-এম-টি), ম্যাসিমো আন গারা এমপি (ইতালী), ওয়েম্যান ব্যানেট (এস-টি-ইউ-আর), রবার্ট গিফিন (সিপিবি) প্রফেসর ম্যারী ডেভিস, আমিনা প্যাটেল (টি-এইচ-ইউনিসন) আবুল চৌধুরী (টি-এইট-এন-ই-ইউ) ডেভিড ব্যান্স বার্গ, জুলি বেগম ও নূরুদ্দিন আহমদ।

বক্তারা বলেন, ম্যালটিক্যালচারাল ব্রিটিশ সোসাইটিতে র‌্যাসিজম ও ফ্যাসিজমেন স্থান নেই। বর্ণবাদীরা যুগে যুগে তাদের লেবাস পরিবর্তন করে শান্তিপ্রিয় সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে, ওয়াজওয়ার মজলির সাদা সার্ট, পরবর্তীতে ন্যাশনাল ফ্রন্ট, বর্তমানে ইংলিশ ডিফেন্স লীগ- এরা সমাজের শত্রু। এই দেশ সব ধর্মের সব বর্ণের। এখানে বর্ণবাদ ও উগ্রবাদের স্থান নেই। আমরা উগ্রবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।

বক্তরা বলেন ইদানিং র‌্যাসিট ও ফ্যাসিজমের পাশাপাশি টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় নতুন করে উগ্রবাদের বিস্তৃতি ঘটেছে, বক্তারা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। আয়োজক সংগঠন গুলোর মধ্যে রয়েছে জুইশ সোস্যালিস্ট গ্রুপ, আলতাব আলী ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশি ওয়ার্কাস কাউন্সিল, গ্রাসরুট ব্লাক ল্যাফট, লিবারেশন মুভমেন্ট, ইউনাইট দি ইউনিয়ন, স্টেন্ড আ্যাপ টু রেসিজম, পিস অ্যান্ড জাস্টিজ, প্রজেক্ট ট্রেড ইউনিয়ন অ্যান্ড কমিউনিস্ট পার্টি অব লাইফ ব্রিটেন, ইন্ডিয়ান ওয়ার্কার অ্যাসিাসিয়েশন (জিবি), মর্নিং স্টার, ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেড মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, টাওয়ার হ্যামলেটস ইউনিয়ন, শেডুয়েল ট্রাস্ট ইউনাইট অ্যান্ড র‌্যারিজম ও রেল মারিটাইম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন।

(ঢাকাটাইমস/৪অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :