ট্রেকের প্রথম নারী এমডি সাদিয়া মোনার্ককে নিতে চান শীর্ষে

প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২১, ২১:১৫ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ২১:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চলতি বছরে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সনদ পাওয়া মোনার্ক হোল্ডিংস শুরু থেকেই বেশ আলোচনায়। কারণ মোনার্ক হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে আছেন নারী উদ্যোক্তা কাজী সাদিয়া হাসান।

মোনার্ক হোল্ডিংসে পথচলার মধ্য দিয়ে দেশের মধ্যে কোনো ট্রেকের প্রথম নারী এমডি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন সাদিয়া। যে কারণে এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে তার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। ২০১৩ সাল থেকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাদিয়া এতদিন অন্যের প্রতিষ্ঠানে শেয়ার লেনদেন করতেন। এখন তার স্বপ্ন তার প্রতিষ্ঠানে লেনদেন করবেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ট্রেকের কার্যক্রম শুরু করা যায় সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করছেন উদ্যমী এই নারী উদ্যোক্তা।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনায় সাদিয়া জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মোনার্ক হোল্ডিংসের কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন।

ট্রেক হলো শেয়ারবাজারে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের লেনদেন করেন। এ হিসেবে ট্রাক অনেকটাই ব্রোকার হাউজের মতো। তবে ট্রেকের মালিকরা ব্রোকারেজ হাউজের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার পাবেন না।

সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনাক হোল্ডিংসকে গত ১৯ মে ৩০ অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

কে এই সাদিয়া হাসান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে স্নাতকোত্তর করা সাদিয়া শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় থেকে। ২০১১ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আইন বিষয়ে স্নাতকে ভর্তি হন সাদিয়া। ভর্তি হওয়ার পর ২০১৩ সালে জড়িয়ে পড়েন শেয়ার ব্যবসায়। একদিকে ব্যবসা অন্যদিকে পড়াশোনা- দুটিই সামলেছেন সমানতালে।

বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা স্বামী মো. আবুল খায়ের হিরোর অনুপ্রেরণায় শেয়ার ব্যবসায় জড়ান সাদিয়া। স্বামীর পরামর্শ ও দুজনের বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবসা করে ধীরে ধীরে সফলতার দেখা পেয়েছেন।

দীর্ঘ সময়ের এই পথচলার ফাঁকে নিজের মধ্যে তিনি স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন কীভাবে নিজের একটি ব্রোকারেজ হাউজ চালু করা যায়। ধীরে ধীরে যখন ব্যক্তিগত পোর্টফোলিওর আকার বাড়তে থাকে তখন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা। 

সাদিয়া জানালেন, সেই স্বপ্ন পূরণের আশায় ডিএসইর ট্রেক ইস্যু করার খবরে সনদের জন্য আবেদন করেন। নানা যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে সনদ পায় মোনার্ক হোল্ডিংস।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান থাকায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন সাদিয়া। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বললেন, এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, তা হলো মোনার্ক হোল্ডিংসকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া।

দেশের বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে সাদিয়া জানালেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের এখন উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বর্তমান শেয়ারবাজার বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত এবং আগের থেকে শেয়ারবাজারের ভিত অনেক শক্তিশালী। এই বাজারে বুদ্ধি করে বিনিয়োগ করতে পারলে ভালো মুনাফা করা সম্ভব।

দেশের কোনো ট্রেকের প্রথম নারী এমডি হওয়ার বিষয়টিকে গৌরব ও আনন্দের আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এখন আমার একটাই স্বপ্ন, মোনার্ক হোল্ডিংসকে দেশসেরা ট্রেকে পরিণত করা। তাহলেই আমার পরিশ্রম সফল হবে।

পুঁজিবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের ফলে শেয়ারবাজার আরও মজবুত হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য থাকলে যেকোনো কাজে সফলতা পাওয়া সম্ভব, আমি সেটায় বিশ্বাস করি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ অনেকে শীর্ষ পদে নারীরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাই আমাদের দেশের নারীরা এখন পিছিয়ে আছেন, একথা বলার কোনো সুযোগ নেই।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে সবার সহযোগিতা পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের শেয়ারবাজারে নারীরা সহজেই বিনিয়োগ করতে পারেন।

সাদিয়া বলেন, লাভা ইলেকট্রোড ইন্ডাস্ট্রিজ লি. নামে আমার ওয়্যার ও অক্সিজেন তৈরির কারখানা রয়েছে। মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অবস্থিত এই কারখানায় অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়াও মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট নামে একটি অত্যাধুনিক হোটেল কাম রিসোর্ট তৈরির কাজে হাত দিয়েছি। দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমি এটির ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছি এবং লাভবান হয়েছি।

শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানা ইতিবাচক উদ্যোগের কথা তুলে ধরে মোনার্ক হোল্ডিংসের এমডি বলেন, বর্তমান নেতৃত্ব শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। যার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। একসময় ডিএসইতে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হতো, এখন নিয়মিতই দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে। এর মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় শেয়ারবাজারের ওপর এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়ে গেছে।

শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বন্ডের লেনদেন শুরু করা গেলে এই বাজার আরও অনেক বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের মনে রাখতে হবে শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। তাই গুজবে বিনিয়োগ না করে, তথ্যনির্ভর বিনিয়োগ করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/বিইউ/জেবি)