‘সরকারকে দেখান আমরা ডাস্টবিনে বসবাস করি’

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৩৯ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২১, ২১:২৪

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

ময়লা ফেলা বা বাছাইয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ফলে সড়কের পাশেই চলছে সে কাজ। আর দীর্ঘদিনের এই কর্মযজ্ঞ পাশের জায়গার পাশাপাশি সড়ককেও ডাস্টবিনে পরিণত করেছে। ময়লাবোঝাই সড়ক মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয়দের। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সেখানকার জনজীবন।

চিত্রটি রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের লোহার ব্রিজের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরঘেঁষা একটি সড়কের। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের এই সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে। বারবার জনপ্রতিনিধিকে জানালেও সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

মঙ্গলবার জায়গাটি ঘুরে দেখা যায়, সড়কের প্রায় ২০০ গজ জায়গাজুড়ে আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধে অসহ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ওই সড়কের চারপাশে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কের এমন দশা কয়েক বছরের। চলতি বর্ষায় অবস্থা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। সড়কের পাশে রাখা ময়লা বৃষ্টিতে ধুয়ে চলে আসছে মূল সড়কে। সড়কজুড়ে আবর্জনা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। হেঁটে চলাচলেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। রিকশা বা ইজিবাইক ছাড়া এই সড়কে পার হওয়া অনেকটা দুরূহ বিষয়। এছাড়া ময়লার তীব্র গন্ধ তো রয়েছেই।

স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা এই এলাকায় থাকি, আমাদেরকে হয়ত সরকার ভালো নজরে দেখে না বা সরকার আমাদের কথা জানে না। নইলে ডাস্টবিনের মধ্যে বসবাস করতে হয়? সরকারকে দেখান, আমরা ডাস্টবিনে বসবাস করি।’

হাত দিয়ে নাক চেপে ওই সড়ক পার হওয়া মো. হাসিব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা। একটা ডাস্টবিন করলে কী সমস্যা? রাস্তাটা দিয়ে চলা যায় না।’

এদিকে স্থানীয় বাড়ি মালিকরা জানিয়েছেন, বাড়ির সামনের রাস্তায় ময়লার ডাস্টবিন থাকায় অধিকাংশ ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। একই কারণে নতুন ভাড়াটিয়া আসছেন না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে বাসা। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সাইদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে তিনি আগে থেকেই অবগত।

সাইদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মানুষজন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারে না। চলতে পারে না। দুর্গন্ধ। বাসা-বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়ারা সব চলে গেছে। বাসা খালি পড়ে আছে। আমি সবই জানি। মানুষজন আমার মা-বোন তুলে বকাবকি করে। আমি দুইবারের কাউন্সিলর। এখানে সবাই আমার পরিচিতজন। আমি লজ্জিত, তাদের জন্য কিছু করতে পারছি না। আমি ব্যর্থ।’

কাউন্সিলর জানান, আট মাস আগে ছাতা মসজিদের পাশের একটি জায়গা ময়লার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার বা এসটিএস করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কাউন্সিলর হিসেবে নিজের কাজটুকু করেছেন তিনি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

কাউন্সিলর বলেন, ‘আমি আট মাস আগে জায়গা দিয়েছি। এখনো কেন এসটিএস হচ্ছে না, এখনো কেন রাস্তায় ময়লা রাখা হচ্ছে এ বিষয়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন, তার সঙ্গে কথা বলেন। নগর ভবনে কথা বলেন।’

এসটিএস নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বাবর আলী মীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আজ (মঙ্গলবার) মাননীয় মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সড়কে যেন ময়লা পড়ে না থাকে তা আগামী তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আর এসটিএস বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৫অক্টোবর/কারই/জেবি)