কোথা থেকে এলো মেট্রোরেল?

আবুল কাশেম
| আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৩৩ | প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৪:১৬

পাতাল রেল ব্যবস্থা পদ্ধতির নাম মেট্রোরেল। ১৫৮ বছর আগে চালু হওয়া লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম এই রেল ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়। এর আরেক নাম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড। দ্য টিউব নামেও বহুল পরিচিত এটি। ভূগর্ভস্থ নাম হলেও এই রেলপথের ৫৫ শতাংশই ভূপৃষ্ঠস্থ। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রযুক্তি ইউরোপের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। মেট্রোরেল ভূগর্ভস্থ হলেও আধুনিকায়নের ফলে উড়াল সংযোগের মাধ্যমেও চলাচল করে।

ইউরোপের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কয়েকটি উড়াল ব্যবস্থা চালু হয়। দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থার বৃহত্তম প্রসার ঘটেছে এশিয়াতে। এশিয়ায় চালকবিহীন রেলও এই ব্যবস্থায় চালু আছে।

রেলপথের দৈর্ঘ্য ও স্টেশন সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম মেট্রোরেল হলো নিউইয়র্ক সাবওয়ে। যদিও লাইনের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম মেট্রো ব্যবস্থা হলো লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড ও সাংহাই মেট্রো। দৈনন্দিন যাত্রী পরিবহন সংখ্যা অনুযায়ী, বিশ্বের ব্যস্ততম মেট্রো ব্যবস্থাটি হলো টোকিও মেট্রো ও মস্কো মেট্রো।

বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড’ সম্পর্কে বিস্তারিত

লন্ডন শহরকে কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি ভূগর্ভস্থ রেলপথের ধারণা ১৮৩০-এর দশকে প্রস্তাবিত হয়েছিল। মেট্রোপলিটন রেলওয়েকে ১৮৫৪ সালে এই ধরনের লাইন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নির্মাণের প্রস্তুতির জন্য লন্ডনের অনুরূপ ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের একটি ছোট শহর কিবলেসওয়ার্থে ১৮৫৫ সালে একটি ছোট টেস্ট টানেল তৈরি করা হয়েছিল। এই পরীক্ষা সুড়ঙ্গটি প্রথম ভূগর্ভস্থ ট্রেনের উন্নয়নে দুই বছর ব্যবহার করা হয়েছিল এবং পরে ১৮৬১ সালে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল।

বাষ্পচালিত লোকোমোটিভ ইঞ্জিনযুক্ত রেলের মাধ্যমে ১৮৬৩ সালের জানুয়ারিতে প্যাডিংটন এবং ফ্যারিংডনের মধ্যে চালু হয় লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড। গ্রেটার লন্ডন এবং যুক্তরাজ্যের বাকিংহামশায়ার, এসেক্স এবং হার্টফোর্ডশায়ার সংলগ্ন কাউন্টির কিছু অংশে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়। উদ্বোধনের পরই এটি সফল হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। প্রথম দিনে এই মেট্রোতে যাতায়াত করেন ৩৮ হাজার যাত্রী। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে অন্যান্য লাইন থেকে রেল ধার করা হয়।

প্রথম টানেলগুলো কাট-এন্ড-কভার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটির ঠিক নিচে নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ছোট, মোটামুটি বৃত্তাকার টানেলকে গভীর স্তরে খনন করা হয়েছিল। প্রথমে এই সব রেলপথে বাষ্পচালিত ইঞ্জিন ব্যবহৃত হতো। ১৮৯০ সালে এই পথে প্রথম ইলেকট্রিক্যাল ট্রেন চলাচল শুরু করে।

এটি বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম মেট্রো সিস্টেম। এর ১১টি লাইনজুড়ে ২৭০ স্টেশনসহ ৪০২ কিলোমিটার বিস্তৃত। নেটওয়ার্কের মাত্র ৪৫ শতাংশ প্রকৃতপক্ষে ভূগর্ভে, প্রধানত শহরের কেন্দ্রে, শহরতলিতে লাইনগুলো বেশির ভাগই মাটির নিচে। বাকি অংশ ভূপৃষ্ঠে এবং উড়ালসড়কে তৈরি।

এই মেট্রো দিয়ে প্রতিদিন ৫০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। সর্বোচ্চ ব্যস্ততার সময়ে ৫৪০টি ট্রেন এই লাইনে পরিচালনা করা হয়। শুরুর পর চাহিদা অনুযায়ী লাইনের অনেক সংস্কার ও বিস্তৃত করা হয়েছে। বিশ্বের প্রথম চালু হওয়ার কারণে পরবর্তীকালে আরও অনেক আপগ্রেড করার প্রয়োজন হয়েছে। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে এখনো সমস্যায় পড়তে হয় লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডকে। ঘণ্টায় ৩৩ কিলোমিটার গতিতে চলে রেলগুলো।

২০০৭ সাল থেকে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের মালিকানায় রয়েছে ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড লিমিটেড। তারাই এটি পরিচালনা করে। ১৯৩৩ সালে লন্ডন প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্ট বোর্ড চালু হওয়ার সময় পর্যন্ত টিউব লাইনগুলোর মালিকানা ছিল বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির। ১৯৮৪ সালে এর মালিকানা লন্ডন আঞ্চলিক পরিবহনে দেওয়া হয়েছিল।

তথ্যসূত্র: গার্ডিয়ান, রেলওয়েটেকনোলজি.কম, ওয়ার্ল্ডঅ্যাটলাস.কম, উইকিপিডিয়া

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :