অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু এবারও আ.লীগের মনোনয়ন চান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ২১:৪১ | প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৪৭

সরকারি কোষাগারে ট্যাক্স জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভোটার বানানোসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মারমার বিরুদ্ধে। এই চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে ‘দুর্নীতির খনি’ হিসেবে পরিচিত। জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) পদ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও নাকি রাখেন তিনি। এ তসব অভিযোগ মাথায় নিয়ে এবারও ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন ছাচিং প্রু মারমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মং প্রু মারমার ছেলে রূপসীপাড়া ইউপির দুবারের চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মারমা ২০১১ সাল পর্যন্ত লামা মংপ্রু পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতা ছেড়ে রূপসীপাড়া ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

জনশ্রুতি আছে, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ছাচিং প্রু মারমার দুর্নীতি আর সম্পদ কেবল বেড়েই চলেছে। স্থানীয়ভাবে ‘দুর্নীতির খনি’ হিসেবে পরিচিত এই চেয়ারম্যান রূপসীপাড়া ইউনিয়নকেও দুর্নীতির চরম অবস্থানে নিয়ে গেছেন।

ছাচিং প্রুর নির্বাচনী হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১১ সালের আগে তার সম্পদ বিবরণীতে রয়েছে এক একর জমি, স্ত্রীর পাঁচ-ছয় ভরি স্বর্ণ ও সামান্য নগদ টাকা।

পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া সম্পদ বিবরণীর তথ্যমতে, তার স্ত্রীর চাকরির বেতন, চেয়ারম্যান হিসেবে তার ভাতা, জমি লাগিয়ত বাবদ বছরে আয় উল্লেখ করা হয়েছে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা।

অভিযোগ আছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কয়েক শ গুণ। লামার রূপসীপাড়া ইউনিয়নে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন প্রাসাদোপম ডুপ্লেক্স বাড়ি। নামে-বেনামে দখলে নিয়েছে শত শত একর বনভূমি।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়ি বাঙালি নারীদের অসহায়ত্বের সুযোগে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি। এক বাঙালি নারীকে ধর্ষণের দায়ে তাকে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তার এসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত গোটা ইউনিয়ন।

এ ছাড়া লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা ও রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার অভিযোগ আছে ছাচিং প্রু মারমার বিরুদ্ধে। মং প্রু পাড়া থেকে রূপসীপাড়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের আসল মালিকদের নাম বাদ দিয়ে নিজের পরিবার ও নিকটজনদের ভুয়া মালিক সাজিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে ছাচিং প্রু মারমার বিরুদ্ধে।

অসহায় মানুষের বাগানের গাছ লুটপাট, সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে ইউনিয়নের ছয়টি বাজার ইজারা, ভিজিডি কার্ড বিতরণে অর্থ আদায়, অন্যের আইডি ব্যবহার করে ভিজিডি রেশন তুলে বিক্রি, হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে নামমাত্র কিছু সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বাকি বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি পরিদর্শনকালে তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন অভিযোগের কথাও জানা যায়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতাকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ আছে ছাচিং প্রু মারমার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকাও লোপাটের অভিযোগ আছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ২০১১, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৮ এবং এই পর্যন্ত জেলা প্রশাসন কর্তৃক ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ড পরিদর্শন হয়েছে চারবার। ২০১৮ সালের পরিদর্শনের নথি বলছে, ইউনিয়নে কোনো বাজার নেই। ফলে বাজার থেকে কোনো রাজস্ব আদায়ের তথ্যও নেই। কিন্তু ইউনিয়নে নাইখ্যং মুখ বাজার, রূপসী পাড়া বাজার, রূপনগর বাজার, অংলা পাড়া বাজার, শীলের থোয়া বাজারসহ মোট ছয়টি বাজার রয়েছে।

অভিযোগ আছে, ২০১১ সাল থেকে প্রিয়তোষ বড়ুয়া নামের এক ব্যক্তিকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে বছর কারবারি বাজার ইজারা দেয়া হয়। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে ১৯/১২ স্মারক মূলে ২০১৯ সালের ১ জুলাই প্রিয়তোষ বড়ুয়াকে ফের ইজারা আদায়কারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এভাবে বাজার ইজারা বাবদ ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৬ লাখ টাকা আদায়ের কোনো হিসাব নেই।

ইউনিয়ন পরিষদে ৩টি মৌজায় ৬৫টি গ্রামে ৩ হাজার ২৫০টি বাড়ি রয়েছে। প্রতিটি বাড়ি থেকে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত কর আদায় করা হয়। প্রতি বছর আট লাখ টাকা করে ৯ বছরে ৭২ লাখ টাকা আদায় করা হয়। অথচ পরিদর্শনকালে বছরে ৮০ হাজার টাকা আদায়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন বলেও জানা গেছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাঙালিদের যৌন হেনস্তা করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি সাহায্যপ্রার্থী এক পয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীকে ফোনে কুপ্রস্তাব দেন তিনি। এর অডিও ক্লিপস ভাইরাল হয়। পরে ওই নারীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বান্দরবান জেলা আদালতে একটি মামলাও করেন ভোক্তভুগী নারী (মামলা নং- সি আর ১৯/২০২১)। মামলাটির তদন্তভার সিআইডির হাতে রয়েছে। ওই নারীর অভিযোগ, ছাচিং প্রু মারমা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে ও অর্থের বিনিময়ে মামলার তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের এই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রকাশিত নানা সংবাদের কপিও যুক্ত করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে ভূমিহীনদের ঘর দিতে ঘুষ নেওয়া, সাংবাদিক নির্যাতন, রাস্তা সংস্কারের টাকা আত্মসাৎ, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বিতরণে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে ধর্ষণ ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় মামলা।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাচিং প্রু মারমা দাবি করেন, গত ১০ বছরে ২১টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে ধর্ষণ ও সাংবাদিককে নির্যাতনের দুটি মামলা তদন্তনাধীন বলে ঢাকা টাইমসকে জানান তিনি।

তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগই মিথ্যা বলে দাবি করে ছাচিং প্রু ঢাকা টাইমসকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করার জন্য এসব মামলা দায়ের ও অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে এই প্রতিবেদককে তার এলাকায় যেতে আহ্বান করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/কারই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :