বিয়ের নাটক করে বছরের পর বছর ধর্ষণ!

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ২২:৫২

প্রায় ১১ বছর আগে বনিবনা না হওয়ায় স্বামী কর্তৃক ডিভোর্সপ্রাপ্ত হন চল্লিশোর্ধ শাহিদা (ছদ্ম নাম)। এরপর বাবার বাড়িতে থেকে একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করতেন। সেখানে কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জ বাজার এলাকার সবজি ব্যবসায়ী মো. নয়ন মিয়ার (৪৫) সঙ্গে।

পরবর্তীতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সেই প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ের প্রলোভনে একাধিক স্থানে একাধিকবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে।

নয়নকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে স্থানীয় এক নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজী) দিয়ে বিয়ের নাটক সাজিয়েও করা হয় যৌন নির্যাতন। শাহিদা বিয়ের প্রমাণ (কাবিননামা) দেখতে চাইলে শুরু হয় সবজি ব্যবসায়ী নয়নের বিভিন্ন টালবাহানা। এ ঘটনায় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও নির্যাতিতা পায়নি কোনো বিচার। অবশেষে নয়ন ও কাজীকে অভিযুক্ত করে ভুক্তভোগী শাহিদা কালীগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণের অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) এইচ.এম ইমন।

অভিযুক্ত নয়ন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের মাথিচর গ্রামের আমান উল্লাহর ছেলে। বর্তমানে তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার মুনশুরপুর এলাকায় স্ত্রী, কন্যা ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে কালীগঞ্জ বাজারে সবজি ও ফলের ব্যবসা পরিচালনা করেন।

নির্যাতিতা শাহিদা জানান, আগের স্বামীর সঙ্গে তালাক হওয়ার পর তিনি বাবার বাড়িতে থেকে স্থানীয় এনজিওর সমিতিতে কাজ করতেন। কাজ করার সুবাদে কালীগঞ্জ বাজারের সবজি ও ফল ব্যবসায়ী নয়নের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর এই প্রেমের সম্পর্ককে পুঁজি করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে।

বিয়ের ব্যাপারে চাপ দিলে আল্লাহ-খোদার কসম কেটে কখনো আবার বিভিন্ন দরবার শরীফে গিয়ে কসম কেটে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন। এভাবে তাদের প্রেমের ও যৌন সম্পর্ক চলতে থাকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে। এর মধ্যে ভুক্তভোগী শাহিদা বিয়ের রেজিস্ট্রিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করার কথা বললে বিয়ের নাটক সাজায় নয়ন।

ভুক্তভোগী জানান, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজী) মো. আবু তাহেরের বাড়িতে নয়ন ও শাহিদার বিয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে কাজী ছাড়াও রাখা হয় উকিল বাবা, মাওলানা ও সাক্ষী। সাদা কাগজে নেওয়া হয় পাত্র-পাত্রীর স্বাক্ষর।

বিয়ে পড়ানো শেষে করা হয় মিষ্টি বিতরণ। তারপর ভুক্তভোগী শাহিদাকে নিয়ে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মুনশুরপুর, দড়িসোম, বাঙ্গালহাওলা ও গাজীপুর মহানগরীর মিরের বাজার এলাকায় বাসা ভাড়া করে স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করেছেন। দীর্ঘ আট বছরে নয়ন বিভিন্ন সময় নিজের ব্যবসার মন্দার অজুহাত দেখিয়ে শাহিদার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন চার-পাঁচ লাখ টাকা। একপর্যায়ে টাকা দিতে না পারায় নয়ন শাহিদার উপর চালায় শারীরিক নির্যাতন।

শাহিদা আরও জানান, এ ব্যাপারে থানা পুলিশের ভয় দেখালে নয়ন তাকে বিয়েই করেনি বলে অস্বীকার করেন। বরং নয়ন তাকে বলেন ‘তোকে ফু দিয়ে বিয়ে করেছি ফু দিয়েই আবার তালাক দিয়েছি। পারলে তুই আমার কিছু করিস। আর এ ব্যাপারে তুই যদি কারো কাছে যাস তাহলে তোকে গুম করে দিবো।’ এখন স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে গড়িমসি করেছেন নয়ন। এদিকে ওই কাজীর কাছে গেলে কাজীও কোনো কাগজপত্র হয়নি বলে জানান শাহিদাকে।

নিকাহ্ রেজিস্ট্রার (কাজী) মো. আবু তাহের বলেন, ওইদিন আমার বাড়িতে তারা এসেছিল। তবে বিয়ের ব্যাপারে কোনো কাগজপত্র বা বিয়ে পড়ানো হয়নি।

অভিযুক্ত নয়ন মিয়া বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার প্রেম বা বিয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে তাকে বিভিন্ন সময় তার বাড়িতে গিয়ে বাজার-সদাই ও ওষুধসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করতাম।’

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :