ছেলেটির বাবা বললেন ওর নাম ‘দৈত্য’

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৭:১৩ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৭:২২

হাসিব রহমান

Story behind surgery: Smiletrain cleft surgery project (আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যারা এই বাচ্চাদের চিকিৎসা খরচ বহন করে) এর সাথে জড়িত থাকার  জন্য যে অনেক বছর ধরেই এইসব বাচ্চাদের অপারেশন করছি। আমার কাছে সেটা ছিল অনেকটা অংক করার মতো ভাবাবেগশুন্য কাজ, অংক মেলানোই বড় কথা। এদের পেছনের গল্প জানার প্রয়োজন বোধ করিনি।

একবার এমনি এক প্রজেক্ট এ সারাদিন ক্লান্তিকর সার্জারির পর যখন পাততারি গোছাতে প্রস্তুত তখন রুশদা এক বাচ্চা (cleft lip with palate) নিয়ে এসে বলল- এর অপারেশন করে দিতে হবে। বললাম এই অনুরোধ (পড়ুন আদেশ) রাখা সম্ভব না, ওকে পরে আসতে হবে, সে সাথে জানতে চাইলাম অনেক বাদ পড়া বাচ্চাদের মাঝে রুশদা একেই কেন নিয়ে আসলো।

রুশদা বলল, 'ওর নাম জিজ্ঞেস কর'। নাম জানতে চাইলে ছেলেটির বাবা উত্তর দিল ওর নাম ‘দৈত্য’।  আমি ভাবলাম  ‘দত্ত’ কে ‘দৈত্য’ শুনেছি।  তখন তার বাবা মৃদু কণ্ঠে বলল, ছেলেটার চেহারার জন্য জন্ম থেকে সবাই ওকে ‘দৈত্য’ বলে ডাকে, এখন তার নামই হয়ে গেছে দৈত্য। যাইহোক ছেলেটার সার্জারি হলো।

সবশেষে এবার যখন ঢাকা রওয়ানা হব, তখন দেখি দৈত্য এর বাবা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এসেছে। যদিও খুব সাধারণ মিষ্টি, তবুও জানি এটি কিনতে এই অতি সাধারণ মানুষটির হয়তোবা একদিনের রোজগার শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই বিরক্ত হয়ে বললাম শুধুশুধু কেন সে মিষ্টি আনতে গেল।

রংজলা শতছিন্ন কাপড় ও ছেড়া স্যান্ডেল পরা লোকটি গর্বিত  চোখে কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিল, ‘স্যার, আজ থেকে আমার ছেলেকে আর কেউ দৈত্য বলে ডাকতে পারবে না, আজ ওর নতুন নাম রেখেছি 'যুবরাজ’।

দৈত্যের মতো অগুণিত বাচ্চা এই ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। গল্পটা বললাম, এই আশায়, হয়তোবা আমার কোনো ছাত্র এ পথে আসতে চাইবে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়

ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/এসকেএস