সংকুচিত গ্রামীণ রাস্তায় জনদুর্ভোগ চরমে

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ)
 | প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৬:৩৫

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলাজুড়ে প্রতিটি গ্রামে অপরিকল্পিতভাবে নানা রকম স্থাপনা নির্মাণ করার ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ রাস্তাগুলো। ফলে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কিংবা মালামাল পরিবহন নিয়ে নিত্যদুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামবাসী।

এছাড়া রাস্তাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন অধিকাংশ গ্রামেই সামাজিকভাবে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। আর অন্যদিকে সরকারের যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে দুই শতাধিক গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামে বসতি গড়ে উঠার শুরু থেকেই অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন রকম স্থাপনা নির্মাণ চলমান রয়েছে। গ্রামের মধ্যে চলাচলের জন্য রাস্তার জায়গা রেখে বসতি বা স্থাপনা নির্মাণের নিয়মনীতি আছে। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে গ্রামের মধ্যে প্রবেশ কিংবা এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে চলাচলে কোনো মতে পায়ে হেঁটে চলার রাস্তা রেখে যে যার মতো বসতবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করছেন।

ভ্যানগাড়ি বা জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স অথবা কোনো আগুনের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলের রাস্তা রাখা হচ্ছে না। ফলে আগুনের দুর্ঘটনা বা যেকোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে উদ্ধারকর্মীরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে কিংবা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পৌঁছানোর কোনো সুযোগ নেই।

এছাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রধান সড়ক, শাখা সড়ক থেকে কাঁধে করে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনে মালামাল এবং স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে। এতে একদিকে যেমন অতিরিক্ত শ্রম, অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, অন্যদিকে নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

অধিকাংশ গ্রামে চলাচলের রাস্তাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন সামাজিক বা পারিবারিকভাবে মারা-মারিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। অন্যদিকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লোকজন। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে রাস্তাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব।

উপজেলার কালীগ্রাম বড়িয়াপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রাম প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা। কিন্তু এতো বড় গ্রামের মধ্যে বয়ে চলা রাস্তা দিয়ে কোনো মতে ভ্যানগাড়ি চলাচল করতে পারে। গ্রামের মধ্যে আগুনের ঘটনা ঘটলে পুরো গ্রাম পুড়ে ভস্মিভুত হলেও ফায়ার সার্ভিস আর অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি পৌঁছতে পারবে না।

সিম্বা গ্রামের সাগর বলেন, আমাদের গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু গ্রামের মধ্যে চলাচলের রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রধান সড়ক থেকে কখনো কাঁধে কখনো ভ্যানগাড়ি দিয়ে বিভিন্ন মালামাল পরিবহণ করতে হয়।

সাগর বলেন, শুধু অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণে উপজেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রামেই রাস্তা নিয়ে সবচাইতে বেশি দ্বন্দ্ব চলছে। সরকারের নিয়মনীতি মেনে স্থাপনা নির্মাণ করলে বা স্থাপনা নির্মাণে সংশ্লিষ্টরা নজরদারি করলে এমন সমস্যা হতো না। ফলে গ্রাম এলাকার দ্বন্দ্বও কমে যেত। এতে সবাই শান্তিতে বসবাস করতে পারতো।

রাণীনগর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লিডার খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই উপজেলার গ্রামের রাস্তাগুলো খুবই সংর্কীণ। গত কয়েকদিনে দুটি আগুনের ঘটনা পেয়েছেন এবং রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এসব আগুনের ঘটনা গ্রামের মধ্যে হলে কাজ করা কঠিন হয়ে যেত। এক্ষেত্রে অধিকাংশ গ্রামই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানান তিনি।

রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট নির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে। অনেক জায়গায় রাস্তার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কাজই করা যাচ্ছে না। সরকার যোগাযোগ খাতে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাস্তার জায়গা সংকুচিত হওয়ায় তা অনেকাংশেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলার একডালা ইউনিয়নের বড়িয়াপাড়া মানিপুকুরে গুচ্ছগ্রামে কাজ পরিদর্শনে যাই। সেখানে প্রধান সড়কে গাড়ি রেখে গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। এতো বড় একটি গ্রাম অথচ অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে উঠায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এতে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না।

ইউএনও বলেন, আগে থেকেই নিয়মনীতি মেনে স্থাপনা নির্মাণ করলে এমন জটিলতার সৃষ্টি হতো না। তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামে কিভাবে রাস্তা প্রশস্ত করে গ্রামের লোকজন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে এবং অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।

(ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :