বাতরোগীদের দোরগোড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা পৌঁছাতে হবে

অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম
| আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ২০:২৬ | প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৩০

সমীক্ষায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজনে একজন আর্থ্রাইটিস বা বাতব্যথায় ভোগেন। বয়সের সাথে সাথে বাতের ব্যথার প্রকোপ ও ব্যথা বাড়তে থাকে। শতাধিক ধরনের আর্থ্রাইটিস রোগ বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনকে কষ্টকর করে তোলে। যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণে অনেকেই অসহায় এবং অক্ষমতার জীবন যাপন করেন।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যাও বাড়ছে। দেশে মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর। নারীদের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর। আমাদের প্রিয়জনরা অনেক দিন থাকবেন, সুস্থভাবে বাঁচবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু বয়সের সাথে এই প্রিয় মানুষগুলো বিভিন্ন রকমের রাতের রোগে ভোগেন। যদি আমরা সচেতন হই এবং যথাসময়ে পদক্ষেপ নিই তাহলে অনেক জটিলতা ও কষ্ট এড়ানো সম্ভব। মানবিক এই ভাবনা আমাদের তাড়িত করে চিকিৎসক হিসেবে। তাই পৃথিবীর মানুষের মঙ্গলের জন্য সচেতনতার দায়বোধ থেকে আজ ১২ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে World Arthritis day।

অতিমাত্রায় প্রকোপের বাত রোগগুলো হলো-

# হাঁটুব্যথা বাত: শতকরা প্রায় ১০ ভাগ (অর্থাৎ বয়স্কদের ১০০ জনে ১০ জন)।

# কোমরব্যথা বাত: শতকরা দুই থেকে তিন ভাগ। অর্থাৎ- প্রতি ১০০ জনে তিনজন।

# গিরাব্যথা বাত: প্রতি ১০ জনে একজন।

এই তথ্য-উপাত্ত আমাদের বলে দিচ্ছে, দেশে কোটি মানুষ কোনো না কোনো বাত রোগে ভুগছেন। যথাযথ সচেতনতা না থাকায় এ রোগ একদিন রোগীদের পুরোপুরি অক্ষম করতে পারে, যা একেবারেই কাম্য নয়।

দেশে বাতব্যথা রোগের ওপর শিক্ষা কার্যক্রম অপ্রতুল। বর্তমানে বাতব্যথা রোগের চিকিৎসকের (রিউমাটোলজিস্ট) সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম। আমরা কৃতজ্ঞ- অনেক পরে হলেও বাংলাদেশ সরকারের একান্ত সদিচ্ছায় ২০২০ সালে দেশের পুরাতন আটটি মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে ৩৩টি রিউমাটোলজিস্টের পদ সৃষ্টি হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে শুধু সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া আর কোথাও এই বিভাগ অদ্যাবধি চালু নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির রিউমাটোলজি বিভাগ এখন পর্যন্ত ৬০ জন বিশেষজ্ঞ রিউমাটোলজিস্ট তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। আরও ৩০ জন রিউমাটোলজিস্ট এই বিষয়ে দেশে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। তবে বাত রোগীদের দোরগোড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পৌঁছানো সময়ের দাবি।

একই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ সমভাবে যেমন দরকার, তেমনি পাস করা রিউমাটোলজিস্টদের যথাযথ পদায়ন এবং বাত রোগের চিকিৎসা উন্নতকরণ অত্যন্ত জরুরি। কেননা অনেক মানুষ এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় দেশের বাইরে চলে যান। অনেক ক্ষেত্রে সেসব দেশেও যথাযথ চিকিৎসা পান না রোগীরা। উল্টো দেশের আর্থিক অপচয় হয়।

চিকিৎসার উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে চিকিৎসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উদাত্ত আহ্বান, আমরা রিউমাটোলজিস্টরা তার সেই আহ্বানকে ধারণ করি। একই সঙ্গে বিষয়টির উন্নতির জন্য জনবল বৃদ্ধিসহ সার্বিক দিকনির্দেশনার আবেদন করছি।

কীভাবে বুঝবেন আপনি আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত

# আক্রান্ত গিরা ফুলে যাওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া;

# গিরার উপরে তাপমাত্রা সাধারণ গিরার তুলনায় বেড়ে যাওয়া;

# রাতের শেষভাগে অথবা ভোরে গিরার ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যাওয়া;

# গিরা ভাঁজ করা বা সোজা করতে ব্যথা অনুভব করা;

# জ্বর এবং অবসাদবোধ করা।

কীভাবে বুঝবেন আপনি দীর্ঘমেয়াদি আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন?

আপনার উপরোল্লেখিত উপসর্গগুলো যদি ছয় সপ্তাহের বেশি থেকে যায় তাহলে বুঝবেন আপনি দীর্ঘমেয়াদি আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন।

আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হলে করণীয়

# পরিস্থিতি ভেদে ঠান্ডা বা গরম শেক দেয়া;

# অল্প মাত্রায় ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা;

# বেশি ব্যথা হলে NSIDs জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা;

# ব্যথার মাত্রা তীব্র হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

লেখক: সেক্রেটারি জেনারেল, এশিয়া প্যাসিফিক লিগ অব অ্যাসোসিয়েশন ফর রিউমাটোলজি (APLAR)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :