ফুডপ্যান্ডায়ও গ্রাহকের টাকা খোয়া যাচ্ছে!

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৫৩ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৫৭

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস

দেশে ই-কমার্স বিশেষ করে পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে যখন সমালোচনা, বিতর্ক তুঙ্গে তখনো এর বাইরে ছিল অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফুডপ্যান্ডা। এখন তাদের বিরুদ্ধেও গ্রাহকের বিশ্বাভঙ্গের অভিযোগ উঠছে। খাবারের চাহিদা জানিয়ে টাকা পরিশোধের পর দীর্ঘ অপেক্ষায়ও খাবার না পাওয়ার অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। এমনকি ফেরত পাননি পরিশোধিত অর্থ। 

এমনই এক প্রতারিত গ্রাহক মাসুদ রানা, যিনি উওরা থেকে ১১০০ টাকার খাবারের চাহিদা জানিয়েছিলেন। এরপর পরিবারসুদ্ধ খিদা নিয়ে বসে থেকেছেন, খাবারের দেখা আর পাননি।

ফুডপ্যান্ডার বিরুদ্ধে টাকা পরিশোধ করেও খাবার না পাওয়ার এমন অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। এ ছাড়া ফুডপ্যান্ডার ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটেও প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ করছেন ভোক্তারা। তবে সবার অভিযোগের জবাবে ফুডপ্যান্ডা দুঃখ প্রকাশ করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েই দায় সারচেন। ফলে ক্রমেই বাড়ছে গ্রাহকদের ক্ষোভ। আস্থা হারাচ্ছে ফুডপ্যান্ডা।

 

 

সম্প্রতি ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিককে। এ অবস্থায় ফুডপ্যান্ডাসহ অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগও সামনে আসতে শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে ফুডপ্যান্ডাসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারে হাজার হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ফুডপ্যান্ডার বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারে ৩২২টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ২৫১টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবেদনের শুরুর দিকে যে মাসুদ রানার কথা বলা হয়েছে, তিনি ঢাকাটাইমসের কাছে তুলে ধরেন তার প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি। তার দেওয়া তথ্যমতে, তিনি একটি পিৎজা পারফেক্ট যার মূল্য ২৩৯ টাকা, ২টি কিডস ‍স্পেশাল পিৎজা যার প্রতিটার মূল্য ৩২৭ টাকা মোট ৬৫৪ টাকা এবং হানি গারলিক স্পাইসি উইংস (Honey garlic spicy wings) যার মূল্য ২১৮ টাকা, মোট চার ধরনের খাবার মিলিয়ে ১১১১ টাকা পরিশোধ করেন চাহিদা জানিয়ে।

মাসুদ রানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি উওরা থেকে ফুডপ্যান্ডায় খাবার অর্ডার করি ১১০০ টাকার। যে লোকটা ডেলিভারি দেবে সে আমাকে বলে ‘আমি খাবারটা খেয়েছি, আর বলে আমি বাইক থেকে পড়ে গেছি।’ পরে আমি উনাকে ফোন করলে আমার ফোন আর ধরেননি। আমি ভাবছি ভোক্তা অধিকারে মামলা করব।’

 

 

ফুডপ্যান্ডায় খাবারের জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত আরেক গ্রাহক সাইদুর রহমান। মিরপুর থেকে ফুডপ্যান্ডা অর্ডার করেছিলেন তিনি। সাইদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি মিরপুরে থাকি। আমি ৩৭০ টাকার খাবারের চাহিদা জানিয়ে আর পাইনি। আমার টাকা গেছে তার চেয়ে বড় দুঃখ আমি তাদের খাবারের জন্য অপেক্ষা করেছি ক্ষুধা পেটে। আমার মতো হাজারো লোক ভুক্তভোগী হচ্ছে, ফুডপ্যান্ড যখন অনলাইনে পেমেন্ট নেয়া শুরু করেছে তখন থেকে।’

সাইদুর রহমান বলেন, ‘২১ মিনিটের ব্যবধানে আমার দুটি অর্ডার ছিল। আমি যে প্রেমেন্ট করেছি বিকাশ থেকে তার স্ক্রিনশট আছে। এমনকি ওরা এখন নতুন একটা চিটারি শুরু করছে। আমার অর্ডারের হিস্টরি থাকবে ওদের অ্যাপসে, অনলাইন পেমেন্ট করলে সেই হিস্টরিটাও থাকছে না যে কমপ্লেন করব। আমার দুইটা অর্ডার এপ্রুভ হওয়ার পরও আমি ডেলিভারি পাইনি। টাকাও ফেরত পাইনি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফুডপ্যান্ডা বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগ দেখভালের দায়িত্বে থাকা এজেন্সি ফোরথট পিআর লিমিটেডকে মেইল করলে তারা এর কোনো জবাব দেয়নি। তার বদলে তারা প্রতারিত গ্রাহকের অর্ডার আইডি চায়।

(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/কেআর/মোআ)