জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রমের সুফল পাচ্ছে ঢাকাবাসী: তাপস

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৮:২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানী ঢাকাকে জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে এর সুফল ঢাকাবাসী পেতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের জায়গার জলবদ্ধতা এবার সম্পূর্ণরূপে নিরসন হবে জানিয়ে পর্যায়ক্রমে সব এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে আশ্বাস দেন মেয়র।

বুধবার সাপ্তাহিক পরিদর্শন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নগরীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র এই আশা প্রকাশ করেন।

শেখ তাপস বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে এরই মধ্যে প্রায় ১০৩ কোটি টাকার কার্যক্রম শুরু করেছি। এই অর্থবছরেও এই খাতের জন্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা বাজেট সংস্থান রেখেছি। কমলাপুর রেল স্টেশনের আশপাশের জায়গা ব্যাপকভাবে জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন থাকে। গত বছর বর্ষাতেও আমরা সেটা লক্ষ্য করেছি। সেজন্য জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি, বড় নর্দমার সংযোগ করছি। যেটা আগে ছিল না। এখান থেকে বক্স কালভার্ট পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হবে। আমরা আশাবাদী, এই এলাকার জলাবদ্ধতা সম্পূর্ণরূপে নিরসন হবে। এভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় কাজ চলছে।’

শ্যামপুর-কদমতলী এলাকায় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, এলাকার লোকজনের ভোগান্তি হচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যাসের লাইন বন্ধ রয়েছে, ফলে শিল্প কারখানাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে করপোরেশন কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। জলাবদ্ধতা নিরসনে যে কার্যক্রম পরিদর্শনে এসেছি এখানেও নতুন করে এমআরটি লাইন স্থাপনের জন্য তারা আবেদন করেছে। আমাদের পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের পরিকল্পনা সাংঘর্ষিক হচ্ছে। তেমনি শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের জন্য আমরা বৃহৎ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পদ্মা রেল সেতুর যে কার্যক্রম, সেই কার্যক্রমের আওতায় যেখান থেকে পানি নিষ্কাশন হতো সেই পানি নিষ্কাশনের মুখগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে এখন পুরো শ্যামপুর শিল্পাঞ্চল এই সময়েও জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন। তাহলে বর্ষা মৌসুমে কী হতে পারে, সেটা চিন্তা করলেই আতঙ্ক পেয়ে বসে।’

মেয়র তাপস আরও বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বারবার বলেছি, তাদের অনুরোধ করেছি, আমাদের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন অন্ততপক্ষে সেখানে কালভার্ট করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে। কিন্তু তারা কোনো নজর দিচ্ছে না।’

এভাবে বিভিন্ন সংস্থা ঢাকাকে পুঁজি করে অপরিকল্পিতভাবে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় ছাড়া কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ দিনে দিনে শুধু বাড়ছে। আমি আবারও সবাইকে অনুরোধ করব- তাদের পরিকল্পনা প্রণয়নের আগেই যেন আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন। আমাদের মহাপরিকল্পনায় আওতায় আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করেই যেন তারা প্রকল্প নেয়। না হলে এই সংঘর্ষ হবে এবং ঢাকাবাসী এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে।’

প্রায় নিজস্ব অর্থায়নে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে দক্ষিণ সিটি। এর মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। তবে প্রকল্পটি সময় সাপেক্ষ উল্লেখ করে দক্ষিণ সিটি মেয়র বলেন, ‘আমাদের দরপত্র চলমান আছে। আবারও তাদের অনুরোধ করব- আগামী ছয় মাসের জন্য অন্তত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেয়, খুলে দেয়। যাতে করে ভুক্তভোগীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়।’

জলবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রমের সুফল ইতিমধ্যে ঢাকাবাসী পাওয়া শুরু করেছে জানিয়ে শেখ তাপস বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়েছি। প্রথম পর্যায়ে আমরা যেসব জায়গা বদ্ধ ছিল, সেগুলো পরিষ্কার করেছি। এর সুফল ঢাকাবাসী গত বর্ষা মৌসুমে কিছু পেয়েছে। যদিও এবার বর্ষা মৌসুম প্রলম্বিত হয়েছে; প্রায় তিন মাস অবধি। কিন্তু তারপরও প্রথম পর্যায় ছাড়া বাকি সময়টা কোনোরকমই কোনো জলাবদ্ধতা ছিল না। দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়েছে।’

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈম, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হকসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডসমূহের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।  

(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/কারই/জেবি)