সর্জন পদ্ধতিতে সবজি চাষ, নোয়াখালীর কৃষকদের সফলতা

মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
| আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১৩:১১ | প্রকাশিত : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১৩:০৮

নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের জমি অতিরিক্ত লবণাক্ত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে আশানূরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই উৎপাদনে ভালো ফলের আশায় পেতে ইন্দেনেশিয়ার এক চাষাবাদ পদ্ধতি চালু করা হয় এ অঞ্চলে। যার নাম সর্জন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করে জেলাটিতে সফলতাও এসেছে।

বর্তমানের জেলার সুবর্ণচর ও হাতিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলায় এ পদ্ধতিতে প্রতিবছর প্রায় ৫৫ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলার ২০৭১ হেক্টর (৫৫১৫ একর) জমিতে সর্জন পদ্ধতিতে সবজির চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সর্জন পদ্ধতিতে জেলার সুবর্ণচরে ১৮৫০ হেক্টর, হাতিয়ায় ২১০ হেক্টর, সদরে ৬ হেক্টর, কবিরহাটে ২ হেক্টর, কোম্পানীগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায় ১ হেক্টর করে মোট ২০৭১ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে শশা, করলা, বরবটি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে অন্তত ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে শশা। এছাড়া ২০৭১ হেক্টর জমির মাচার নিচে চাষ হচ্ছে তেলাপিয়া, রুই, কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আগামী মৌসুমে আরও ৪০০-৫০০ একর জমি সর্জন পদ্ধতির আওতায় আনা হবে।

জানা গেছে, সর্জন পদ্ধতিতে সবজি ও মাছ চাষ এখন চরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় নতুন এ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উপকূলের কৃষদের মাঝে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি আইল, তার উপর মাচা। মাচায় লাগানো হয়েছে শিম, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, শসাসহ নানা সবজি। সেই সবজির মাচার নিচে পানি। দেখতে লেক মনে হলেও সেখানে চাষ করা হয়েছে দেশীয় নানান প্রজাতির মাছ।

কৃষকরা জানান, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে সর্জন পদ্ধতিতে সবজির আবাদ হয়। ফলে ভাগ্য পরিবর্তন শুরু হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। স্বল্প খরচে অধিক আয়ের কারণে কৃষকদের কাছে এ পদ্ধতি হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। প্রতি একর জমিতে প্রায় এক লাখ টাকার সবজি উৎপাদন হয়। সর্জন পদ্ধতির এ উদ্যোগকে জেলা জুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত কৃষক তৈরি ও কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ ব্যবস্থা বা প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।

চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মনির হোসেন বলেন, আগে আমাদের ক্ষেতে তেমন কোনো ফলন হতো না। বর্তমানে সর্জন পদ্ধতি সবজি চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছর আমাদের দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ থাকে। যা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলছে।

কৃষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে এক একর জমিতে শশা, সিম ও মাছ চাষ করছি। নিজের জমিতে উৎপাদিত সবজি ও মাছ বিক্রি করে যা আয় হয় তা নিয়ে আমরা অনেক সুখে আছি।

জাফর আহমেদ নামের একজন পাইকার বলেন, আমরা চরের কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করে সুবর্ণচর, মাইজদী, দত্তেরহাটসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। চলতি মৌসুমে আট টাকা করে ৪০ হাজার কেজি শশা, ২০ টাকা করে এক হাজার ১০০ কেজি শিম, ১৮ টাকা করে তিন হাজার কেজি চিচিঙ্গা ও লাউসহ পাঁচ লাখ টাকার সবজি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করেছি।

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, এ অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বর্তমানে সর্জন পদ্ধতিতে শশা, বরবটি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা’সহ উৎচফলনসিল সবজি উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাষীদের প্রশিক্ষণ, বীজ ও সারসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শহীদুল হক জানান, নোয়াখালীর চরাঞ্চলে সর্জন পদ্ধতিতে স্থানীয়দের আগ্রহ বাড়ায় আগামী মৌসুমে চাষের জমি আরও বাড়ানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪অক্টোবর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :